প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ২, ২০২৫, ৫:১৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
ক্রিকেট জুয়ায় কাঁপছে সরাইল

মো.তাসলিম উদ্দিন, সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া): হঠাৎ রুটি খাওয়ার ইচ্ছা হলো বাজার রাস্তা একবারে নিরব মঙলবার রাতে চলছিল ভারত- শ্রীলংকা এশিয়া কাপ ম্যাচ। হোটেল ঢুকতে দেখি প্রতিটি চেয়ারে মানুষ বসা সবার নজর টিভির দিকে। একটু জায়গা করে রুটি দিতে বললাম। টিভিতে লড়াইয়ে ভারত ও শ্রীলংকা।ওভারের খেলায় ম্যাচের জয়-পরাজয়নিশ্চিতের লড়াই চলছে। টান টান উত্তেজনা দুই পক্ষের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মাঝে। এর চেয়ে ঢের উত্তেজনা বাজিকরদের মাঝে। সরাইল বাজারের চায়ের সঙ্গে রুটি হোটেলের ওই ওভারে ৮ রান হবে বলে সহকর্মী সামির মিয়ার সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন মকবুল। সামির মিয়া বলছিলেন ১৫ রানের বেশি হবে। মকবুল বলেছিলেন সর্বোচ্চ আট রান। যে জিতবে পাবেন ৫ হাজার টাকা। ওভার শেষে বাজিতে জিতে মকবুল হাতে পান ৫ হাজার টাকা।
শুধু মকবুল বা সামিরই নন এশিয়া কাপ নিয়ে টিভির সামনে এমন বাজিতে মজছেন বহু মানুষ। বাংলাদেশে এখন আলোচিত শব্দ ‘ক্রিকেট জুয়া’৷ এই জুয়া এখন ছড়িয়ে পরেছে শহর থেকে গ্রামে। একে কেউ কেউ বলে টাকা লাগানো। আবার কেউ বলেন বাজি৷ এশিয়া কাপ,বিপিএল আইপিএল সহ নানা খেলা চলার সময় চলে এই জুয়া বা বেটিং। বিপিএল, আইপিএল, বিশ্বকাপ, ওয়ানডে, এমনকি দেশ-বিদেশের টেস্ট খেলা ঘিরেও চলে বাজিকরদের রমরমা জুয়া। যেখানে জড়িয়ে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকেই। এমনকি সমাজের শ্রমজীবী মানুষেরা, যারা ‘দিন আনে দিনে খায়’ তারাও এই জুয়ার জালে পড়ে হারাচ্ছেন কষ্ট করে জমানো সামান্য পুঁজি। এছাড়া স্কুল- কলেজের কোমলমতি ছাত্ররা বিপথগামী হচ্ছে। একইসঙ্গে জুয়ায় হার-জিতকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও চলে এই জুয়া বা বেটিং খেলা। ক্রিকেট বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে।ক্রিকেট জুয়া হয় নানাভাবে। দলের হার-জিত, পরের বলে কত রান বা ছয়-চার হবে কি না, পরের ওভারে ব্যাটসম্যান আউট হবেন কি না, একজন বোলার কত উইকেট পাবেন, ব্যাটসম্যান কত রান করবেন, দলের কত রান হতে পারে, নির্দিষ্ট দল কত রান বা উইকেটের ব্যবধানে জিতবে ইত্যাদি ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়েই চলছে বাজি ধরা। বাজির দরও ঠিক করেন নিজেরাই।বল বাই বল বাজির ক্ষেত্রে প্রতি বলে বলে একটা নির্দিষ্ট হারে বাজি ধরা হয়ে থাকে। যেমন, বলে ছয় হবে কিনা, হলে তা কোন বলে হবে, রান আউট হবে কিনা, চার হবে কিনা, কোনো আউট হবে কিনা, হলে তা কোন ধরণের আউট হবে ইত্যাদি।
৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঝালমুড়ি বিক্রেতা বলেন, আজ আমার বিক্রি কম জানতে চাইলে এমন করে বলেন, টিভিতে ক্রিকেট খেলা চলছে দেখেনতো মানুষ নাই। কোন পুলাপান দেখা যায় না। একটা বল কি বল মাইরা মাইরা মোবাইল থেকে টিভি সামনে খেলা দেখতেছে। আজ আর আমার ঝাল মুড়ি বিক্রি ভালো হবে না।স্থানীয়রা জানায়, প্রতি রাতে এই এলাকায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার জুয়া চলে। ক্রিকেট জুয়ার পুরো ব্যবস্থায় থাকেন কয়েকজন বড় ডিলার। তারা দুই পক্ষের লোকজনের কাছে মোবাইলে অর্ডায় নেয়। জুয়ায় বিজয়ীদের ঠিকমতো টাকাও পরিশোধ করে তারা। হাজারে ১০০ টাকা করে কমিশন নেয় এসব ডিলাররা।জানা যায়, পর্দার পেছনে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব ডিলারদের কেউ কেউ এখন লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন।
অপরদিকে, জুয়া খেলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে সরাইলের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী। জুয়ার নেশায় নগদ টাকা থেকে শুরু করে, বাড়ির আসবাবপত্র, স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত দিয়ে বাজি ধরছে জুয়ারুরা। জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনও পড়েছেন বিপাকে। অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারে। পুরো এলাকার মানুষের কাছে এখন জুয়া এক সামাজিক মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। নব্য এই জুয়া বন্ধ করা না গেলে শত শত পরিবারকে এর কঠিন মূল্য দিতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরাইল উপজেলার এক যুবক জানান, আমি ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করি। হঠাৎ কিভাবে যে জুয়ায় মজে গেলাম বুঝতেই পারিনি। শুরুতে ৫০০ টাকা দিয়ে খেলা শুরু করি। একটা সময় এক দিনেই বাজি ধরেছিলাম ৪ লাখ টাকা। আমি ছোট থেকে ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন করেছিলাম তা এই জুয়ায় হারিয়েছি। আমি সর্বমোট ২২ লাখ টাকা হারিয়েছি। এতে আমার ও পরিবারের সম্মানও নষ্ট হয়েছে। আমার মতো সরাইলের অনেকেই জুয়ার নেশায় সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এখন আমি এ পথ থেকে সরে এসেছি। আমি অনেক শান্তিতে আছি।
তানবির বলেন, এটা সব জায়গায় চলতাছে।কাজল মিয়া জানান,এগুলোকে বন্ধ করার দরকার এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করছি। ক্রিকেট জুয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো.আসলাম হোসেন বলেন, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।তদন্ত পূর্বক ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বলেন ওসি মো. আসলাম হোসেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: [email protected]
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.