সময়ের নিউজ ডেস্কঃ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, আমাদের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির অভাব নেই, কিন্তু জনবলের কিছুটা অভাব রয়েছে। জনবল ও হাসপাতাল-ক্লিনিক উন্নয়ন কাজের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। গত ৫০ বছরে যেখানে ১৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে, করোনার দুই বছরে সেটি তিনগুণ বেড়েছে। ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার, নার্সও দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা কাজ করেছি বলেই স্বাস্থ্যসেবা অনেকদুর এগিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করেছি, মাঠে নেমেছি। যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে হবে, নইলে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ৯ অক্টোবর রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে-ভিউতে আয়োজিত চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সভার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহসহ অন্যান্য চিকিৎসা কর্মকর্তাবৃন্দ। এদিকে আজ ১০ অক্টোবর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন রয়েল রোডে ফিতা কেটে নবনির্মিত বিভাগীয় স্বাস্থ্য ভবনের শুভ উদ্বোধন শেষে মুনাজাত, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাঃ মৌমিতা দাশ ও ডাঃ রশ্মি চাকমা।
পৃথক সভায় জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন অনেক হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে। ব্রেইন টিউমার, বাইপাস সার্জারির মতো রোগের অপারেশন দেশেই হচ্ছে। কোনো ওষুধের অভাব নেই। দু’একজনের জন্য সকলের বদনাম হোক-সেটা আমরা চাইনা। স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু করোনা মহামারিতে এ প্রয়াস কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ইউনিয়ন থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে এক্স-রে, অ্যানেস্থেসিয়া ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং লোকবল ঠিক আছে কি না, মানুষ সেবা পাচ্ছে কি না সেগুলো দেখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধি ও হাসপাতাল প্রধানের অনেক দায়িত্ব। ডাক্তার নার্স ঠিকমতো আসে কি না, কর্মস্থলে থাকে কি না সেটি দেখতে হবে। হাসপাতালের টয়লেট ও বেড ঝকঝকে থাকতে হবে। তবেই আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানের পরিবেশ ঠিক থাকবে। আর এটি ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেটি দেখার দায়িত্ব হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের। সঠিক ও সময়োপযোগী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য লিডারশীপের বিকল্প নেই। দেশের ১০ বেডের হাসপাতাল গুলোকে শীঘ্রই ৩১ বেডে উন্নীত করা হবে। স্বাস্থ্যসেবার ৮০ শতাংশ বদনাম উপজেলা থেকে। আমরা আর এখন দুর্নাম শুনতে চাইনা। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করা গেলে সদর ও মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমবে। ডাক্তার-নার্সরা আন্তরিক হলেই স্বাস্থ্যসেবায় আশানুরূপ পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। সেখানে ৩০-৩২ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে রোগীরা। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে নতুনভাবে গড়ার বর্তমান সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশে এখন দেড় লাখ শয্যা। প্রতিটি বড় হাসপাতালে আইসিইউ আছে। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের হার এক সময় ২ ভাগও ছিল না, এখন তা ৬৫ শতাংশ। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। হাসপাতালের কোথায় কি সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের কোন কোন জেলায় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকে মারা যাচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের কওে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। ব্লাড ব্যাংক, প্যাথলজি, সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক নিয়মিত ভিজিটের আওতায় রাখতে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে করোনার ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে এদেশ আমেরিকার চেয়েও ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমানে ১ম, ২য় ও ৩য় ডোজ মিলে দেশে প্রায় ৩১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরণের দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আন্তরিকতায় এটা সম্ভব হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমে সফলতা অর্জন করতে পারলে স্বাস্থ্যসেবায়ও সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক (ডাঃ) আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে, ডাঃ নওশাদ খান ও ডাঃ রশ্মি চাকমার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক (ডাঃ) মোহাম্মদ ইসমাইল খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-অনুবিভাগ) মোঃ সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) সৈয়দ মজিবুল হক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক (ডাঃ) এ কে এম আমিরুল মোরশেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক (ডাঃ) আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক (ডাঃ) মোঃ শামিউল ইসলাম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব (সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) এ জেড এম শারজিল হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর (উপজেলা হেলথ কেয়ার) ডাঃ মোঃ রিজওয়ানুর রহমান, লাইন ডাইরেক্টর (হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) ডাঃ মাজহারুল হক তপন, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হসপিটাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডাঃ শেখ দাউদ আদনান ও সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ছাবের, বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নীহার রঞ্জন নন্দী, রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা,ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এস.এম নুরুল করিম, নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ নুয়েন খীসা, লক্ষীছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আতাউর রহমান চৌধুরী, সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা মোঃ নুরুদ্দিন ও ফটিকছড়ি উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ ডাঃ নাবীল চৌধুরী প্রমূখ। চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, বিভিন্ন উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তাগণ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।