সময়ের নিউজ ডেস্কঃ গত ৮ এ নভেম্বর রাত আনূমানিক ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলি থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়নের ০৫ নং ওয়ার্ডের দেওয়ান বিবির বাড়ির সামনে রাস্তার সাথে ডোবার পানি থেকে  গলায় কাপড়ের বেল্ট দ্বারা ফাঁস লাগানো অজ্ঞাত ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করে কর্ণফুলি থানা পুলিশ, এ ঘটনায় শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ, কর্ণফুলী থানার এসআই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে ৯ নভেম্বর এজাহার দায়ের করেন।

প্রাথমিকভাবে জানা যায় হত্যাকান্ডের শিকার ব্যাক্তিটির পূর্ব থেকে শরীরে ডান হাত ছিল না, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হত্যাকান্ডের ন্যায় জঘন্য অপরাধের শিকার হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মামলা রজু হওয়ার পর পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা এর নির্দেশনা মোতাবেক মামলার তদন্তভার পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর উপর ন্যাস্ত করা হয়।

মামলার তদন্তভার গ্রহণ করার পরপরই পিবিআই প্রধান, অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার (বিপিএম) বার, পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধানে ও দিক নির্দেশনায়, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানার নেতৃত্বে এই ক্লুলেস শারীরিক প্রতিবন্ধী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, নিহতের পরিচয় ও আসামীদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

১৩ নভেম্বর রবিবার সকালে পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ে প্রেস ব্রীফিং এর মাধ্যমে জানানো হয় নিহত ব্যাক্তি একজন প্রতিবন্ধি অটো রিকশা চালক, সে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরের থানারহাটের মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে। নিহত হাসান চট্টগ্রাম জেলার বাকলিয়া থানাধীন মাষ্টার কলোনী এলাকায় অটো রিকশা চালাতেন এবং এখানেই ভাড়া বাসায় থাকতেন।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় রাত ১টা ৩০মিনিটে কর্ণফুলি থানাধীন  শিকলবাহা ইউনিয়নের দেওয়ান বিবির বাড়ির অদূরে একজন ডান হাত বিহীন অটো রিক্সা চালক ২জন প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাচ্ছেন, পরের দিন ওই রিক্সা চালকের লাশ পাওয়া যায় একই স্থানের কাছে একটি ডোবায়। পরে খুঁজে পাওয়া যায়নি সেই রিক্সা এবং দুই যাত্রীকেও। লাশের পাশ থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়, সেই স্যান্ডেলের সূত্র ধরে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ গুলো থেকে আরও পাওয়া যায় ২জন ছেলেকে যাদের একজনের পায়ে জুতা নেই, তাদের মুভমেন্ট ও পায়ে জুতা না থাকায় এবং লাশের পাশ থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করায় তাদেরকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে পিবিআই। এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ঘাতক দুই আসামী মোঃ আলাউদ্দিন এবং শাকিল আহমেদ কে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন লালদীঘির পাড় সংলগ্ন গণশৌচাগারে পাশ হতে গ্রেফতার করা হয়।

আসামীদের জিঞ্জাসাবাদে জানা যায়, তারা  সিএমপি কোতোয়ালি থানাধীন সিনেমা প্যালেসের সামনে থেকে নিহত হাসানের অটোরিকশাটি শিলবাহা কলেজ বাজারের পূর্ব পাশের আদর্শ পাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করে, শিকল বাহা কলেজ বাজার আদর্শ পাড়া বড় মাঝির বাড়ির সামনে গ্রাম্য রাস্তার উপর পৌছানোর পর ভাড়া দিয়ে ভিকটিম হাসানকে অটো রিক্সাটি জোরপূর্বক রেখে দিতে চায়, পরে ভিকটিম হাসানের অটোরিকশার সাথে  থাকা একটি কাঠ দিয়ে তাদেরকে বাড়ি মারে তখন আসামি শাকিল ভিকটিমের হাত থেকে কাঠিটি কেড়ে নেয় এবং উক্ত কাঠ কাঠ দিয়ে ভিকটিম হাসানকে আঘাত করে। এক পর্যায়ে আসামি শাকিল ক্ষিপ্ত হয়ে অটো রিক্সাতে থাকা বেল্ট দিয়ে ভিকটিম হাসানের গলায় পেঁচিয়ে  টান দিলে হাসান গাড়ি থেকে পড়ে যায় তখন আসামি আলাউদ্দিন তাকে  চেপে ধরে এবং আসামি শাকিল ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করে। এরপর আসামি আলাউদ্দিন ভিকটিমের দুই পা ধরে টেনে রাস্তার পাশে ডোবাতে নিয়ে ঝোপের মাঝে ঠেলে দিয়ে লুকিয়ে লাশ গুম করে ভিকটিমের নিকট থাকা মোবাইল ফোন ও ব্যাটারি চালিত কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়।

নিহত হাসানের ভাই ইয়াছিন পিবিআই কর্তৃক দ্রুত আসামীদেরকে গ্রেফতার করায় ধন্যবাদ জানান এবং ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।