চট্টগ্রামঃ সীতাকুণ্ডে যুবককে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে বলাৎকারের অভিযোগে অভিযুক্ত সিরাজ উদদৌলা শামীম নামে সেই মাদ্রাসা শিক্ষককে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। একইসাথে সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষকের দায়িত্ব পালনেও তাকে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ৯ নভেম্বর সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গোপ্তাখালী গ্রামের জামে মসজিদের দোতলায় নিজ কক্ষে এক যুবককে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করার অভিযোগ ওঠে সিরাজউদদৌলা শামীম নামে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে ঘটনাটি আজ বৃহস্পতিবার ১৬ নভেম্বর প্রকাশ্যে আসে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই শিক্ষকের ছবি ও বলাৎকারের অভিযোগের কথা ভাইরাল হয়ে পড়লে এ নিয়ে সীতাকুণ্ডজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, শামীম নামে ওই শিক্ষক এর আগেও নানা সময়ে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছিলেন। সর্বশেষ সীতাকুণ্ডের কুমিরায় বলাৎকারের ঘটনায় জনতার হাতে আটক হয়ে গণধোলাইও খেয়েছিলেন শামীম। সেসময় তাকে মসজিদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
অভিযোগ ওঠেছে শামীম প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে সীতাকুণ্ডের স্বনামধন্য আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগের শিক্ষকের চাকরী ভাগিয়ে নেন। এবার ফের তার বিরুদ্ধে বলাৎকারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সীতাকুণ্ডের অনেক মানুষ শামীমকে গণধোলাই দিয়ে চাকরীচ্যুত করার পাশাপাশি সীতাকুণ্ড ছাড়া করার দাবি জানান।
জানা যায়, ৯ এপ্রিল গোপ্তাখালী জামে মসজিদের সামনে থেকে এক বেড (শীতবস্ত্র) সেলাইকারীকে বেড সেলাইয়ের কথা বলে মসজিদের দোতলায় নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় শামীম। অভিযোগ ওঠেছে, সেদিন শামীম ওই যুবককে বলাৎকার করে। পরে ঘটনা জানাজানি হলে মসজিদ কমিটির দায়িত্বশীলরা শামীমকে হুশিয়ার করে সতর্ক করে। এরপর এলাকার যুবকরা বলাৎকারের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে মসজিদ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে গোপ্তাখালী মসজিদ কমিটি শামীমকে খতিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। একইসাথে শামীমের অন্য কর্মস্থল সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও তাকে সাময়িকভাবে মাদ্রাসায় আসতে নিষেধ করেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সিরাজ উদদৌলা শামীম বলেন, আমি ওই যুবককে বাসার বেড মেরামত করার জন্য ডেকে নিয়েছিলাম। পরে দরদামে না হওয়ায় তাকে পাঠিয়ে দেয়ার সময় জানতে চাইলাম সে কোথায় লেখাপড়া করেছে। উত্তরে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে জানালে আমি তার মাথার উপর হাত বুলিয়ে দিই। কোন অনৈতিক কাজের সাথে আমি জড়িত নই।
এক প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে এ কাজ করেছি এমন বক্তব্য আমার ও মাদ্রাসা অধ্যক্ষের মধ্যে ব্যক্তিগত ছিল। তিনি যদি সেটি প্রকাশ করে দেন আমার কিছু করার নেই। আমার জীবনের অতিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোনটিই মাদ্রাসায় ঘটেনি। এসব বাইরের ঘটনা। এসময় এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে ও বিষয়টিকে তবলীগ জামায়াতের দুটি পক্ষের বিরোধের অংশ বলেও দাবি করেন শামীম।
তিনি আরও বলেন সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। থানা পুলিশ গোপ্তাখালী মসজিদ কমিটির কাছে আমার উপর অবিচার হয়েছে মর্মে লিখিত মুছলেকাও চেয়েছে। আপনি থানার খবর নিলে আমার নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারবেন।
তার কথার সূত্র ধরে সীতাকুণ্ড থানার এএসআই হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে কোন ভিকটিমকে পাওয়া যায়নি। মসজিদ কমিটি বিষয়টি মিমাংসা করে দিবেন বললে আমরা ফিরে আসি। কোন মুছলেকার ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণি বলেন, তার বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই তাকে সাময়িকভাবে মাদ্রাসায় আসতে নিষেধ করা হয়েছে। মাদ্রাসার সভাপতি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে আসলে সিদ্ধান্ত দেবেন। জানতে চাইলে গোপ্তাখালী জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি অসুস্থ। হাসপাতালে আছি। পরে কথা বলব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: [email protected]
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.