হাটহাজারীতে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্রে প্রতিপক্ষের উপর দুই দফায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। এসময় একই কাজে তার আপন ভগ্নিপুত্র এবং ভাতিজা সরাসরি হামলায় অংশগ্রহন করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার ৪ নং গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কাটাখালিকুল সৈয়দপাড়া এলাকায় শনিবার ও সোমবার ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত সৈয়দ জাহেদ হোসেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। ইতিমধ্যে হামলার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় হাটহাজারী মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে ইউপি সদস্য দেশীয় অস্ত্রে প্রতিপক্ষের উপর হামলার ঘটনাকে মোটেও উচিত হয়নি দ্রুত এ বিষয়ে মিটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুর রহমান।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে উভয়পক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক একটি বিষয় নিয়ে সমাধানের এক পর্যায়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সৈয়দ জাহেদ হোসেনের ভগ্নিপুত্র মোঃ কাইয়ুম হাসানের সাথে হামলার শিকার মোঃ আব্দুল সেলিমের ভাতিজা সাজ্জাদের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মারামারি লেগে যায়। এসময় আব্দুল সেলিম তাদের থামাতে চাইলে কাইয়ুম হাসানের হাতে থাকা চেইনের আঘাতে নিজের মু্খে নিজে আঘাত পায়। যদিও কথা উঠে আব্দুল সেলিম তাকে আঘাত করে।

সমাজের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকায় সেদিন কোন হামলা না হলেও এর জের ধরে শনিবার সকালে আব্দুল সেলিমকে একা পেয়ে ইউপি সদস্য জাহেদ হোসেন, কাইয়ুম হাসান ও ইউপি সদস্যের ভাতিজা সৈয়দ মোঃ মাহতাব দেশীয় অস্ত্র (হকিস্টিক, লোহার স্টিক) দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে হামলা করে মারার চেস্টা করলেও কোনমতে রক্ষা পায় সে। একইদিন বিকেলে কাইয়ুম হাসানের পিতার অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেয় এবং সমস্যা হলে সামাজিকভাবে সমাধানের কথা বলে। কিন্তু একদিন পর সোমবার ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তাদের উপর দ্বিতীয় দফায় একই কায়দায় হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় তাদের বাধা দিতে গেলে ওই পাড়ার নারী পুরুষসহ বেশ কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়। হামলার পর পরই মডেল থানায় সেলিম বাদি হয়ে অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানার ওসি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকা ও পরবর্তী কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মুচলেকা নেয় এবং সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেয়। তবে ইউপি সদস্যের লোকজন থানায় সমাধান হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানালেও অপরপক্ষ বলছে সমাধান নয় পরবর্তী কোন বিবাদে না জড়াতে পরামর্শ দেয়া হয় এবং বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।

জানতে চাইলে সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ মুঠোফোনে বলেন, ঘটনা যাই ঘটুক একজন ইউপি সদস্য এভাবে হকিস্টিক হাতে বিবাদে জড়াতে পারেনা। উনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এভাবে হলে সুবিচার কিভাবে আশা করবে এলাকবাসী।

এদিকে হামলার ঘটনা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার সময় একজনের কাছ থেকে হকিস্টিক কেড়ে নিয়ে নিজের হাতের রাখেন। হঠাৎ তার ভগ্নিপুত্রের উপর অপর পক্ষ হামলা করলে হাতে থাকা হকিস্টিক দিয়ে তাদের ভয় লাগান। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজটি ঠিক হয়নি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় তার মুঠোফোনে একটি কল আসে তবে জরুরী কাজে থাকায় রিসিভ করতে পারেন নি। পরে ঘটনার বিস্তারিত জেনে নেন। কিন্তু পরিষদে কোন অভিযোগ না দিয়ে উভয়পক্ষ থানার দ্বারস্থ হন। হকিস্টিক হাতে ইউপি সদস্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই নিন্দনীয় আইনবহির্ভুত কাজ। পরিষদে মিটিং ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, এটা সামাজিক দ্বন্দ। তুচ্ছ বিষয়ে দুটি পক্ষ মারামারি করছে। উভয় পক্ষকে ডেকে যেন আর মারামারি হামলার ঘটনা না ঘটে সেজন্য মুচলেকা নিয়েছি। একইসাথে সমাজের নেতৃবৃন্দদের বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য বলে দেয়া হয়েছে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম মশিউজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কিছু জানায়নি। একজন জনপ্রতিনিধি হকিস্টিক হাতে হামলা করা এটা অবশ্যই অপরাধ। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।