
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছোট-বড় অন্তত ৬০টি তেলের ডিপোর সন্ধান পেয়েছে প্রশাসন। এসব ডিপো কোন ধরণের লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সোমবার (১০ জুন) চট্টগ্রাম জেলা এনএসআই এর তথ্যের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেতুলতলা এলাকাসহ কয়েক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে জেলা এনএসআই, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে কোন প্রতিষ্ঠানকে জেল-জরিমানা করা না হলেও লিখিত মুচলেকা আদায় করা হয়েছে। সেইসাথে জাহাজভাঙা শিল্পকে ঘেষে গড়ে ওঠা ফার্নেস অয়েল মিল মালিক সমিতির নেতাদের ডেকেছে সীতাকুণ্ড এসিল্যাণ্ড। লাইসেন্স করার বাধ্যবাধকতার জন্য তাদেরকে তার দপ্তরে শুনানীতে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে সোনাইছড়ির গুরে মিয়া ও সেলিমের ডিপোতে জাহাজভাঙা শিল্প থেকে সংগৃহিত কালো তেল পরিশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও ট্রেড লাইসেন্স নেই। অথচ তারা সাইলো মেশিনের সাহায্যে জাহাজের কালো তেল ছাকুনির সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ ও বাজারজাত করে আসছে।
এমনকি অভিযানেও ওই দুই কারখানার শ্রমিকদের সাইলো মেশিন ব্যবহার করে জাহাজের কালো তেল ছাকুনির সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে পদ্মা ও যমুনার লোগে ব্যবহৃত ২টি তেলের ট্যাংকারে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে লোড করতে দেখা গেছে। এসময় ২টি ডিপোতে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার লিটার কালো তেল পাওয়া যায়। গুরে মিয়া ডিপোর মালিক সুমন কর্মকার অপরাধ স্বীকার করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স সংগ্রহ করে ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলে লিখিত অঙ্গীকার করেন।
অভিযানে আরও জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৬৫টি কালো তেলের ডিপো রয়েছে। ডিপোগুলো প্রায় ২০-২৫ বছর যাবৎ জাহাজের কালো তেল মজুদ ও বাজারজাতকরণ করছে।েএ অবস্থায় সবকটি ডিপোকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয। অন্যথায় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
এক হিসেবে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন ৬৫টি কালো তেলের ডিপো লাইসেন্স বাবদ প্রতি বছর প্রায় ১১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। গত ২০-২৫ বছর ধরে ডিপোগুলো বর্ণিত লাইসেন্স গ্রহণ না করার সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এছাড়াও এসব ডিপো ব্যাপকহারে পরিবেশ ও শব্দ দূষিত করছে। বৃষ্টির সময় ডিপোগুলোর কালো তেল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পুকুর, খাল ও ড্রেনের সাহায্যে সমুদ্রের পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।
এছাড়াও জাহাজের কালো তেল যথাযথ প্রকিয়াকরণ ব্যতীত বিভিন্ন কল-কারখানার, গাড়ি, ব্রিক ফিল্ডে ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও পানি দূষণসহ জৈববৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়ছে। ফায়ার সেইফটি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই এসব ডিপোতে। অধিকাংশ ডিপোই আবাসিক এলাকা ও বহুতল ভবনের পাশ্ববর্তী হওয়ার অগ্নিকাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা প্রকট।