চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় দুই দিন ধরে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে রাস্ট্রবিরোধী একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এতে দফায় দফায় হামলা, মারধর, সরকারি অফিস-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটছে। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন ৩ শিশু।
পুলিশ বলছে, দেশের শিল্পখাতের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ইপিজেড। তাই দুষ্কৃতকারীরা ইপিজেডকে বেচে নিয়েছে যাতে দেশের শিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলে অচল করে দেওয়া যায়। এজন্য তারা গুজবের মাধ্যমে ৩ শিশুকে জিম্মি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা এগারোটায় নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এণ্ড অপস) মো. রইছ উদ্দিন। এসময় ওই তিন শিশুকেও হাজির করা হয়।
তিনি জানান, গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ইপিজেডস্থ শেলটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ভেতরে ৩ জন শিশু প্রবেশ করলে ওই শিশুগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই গুজব শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকেরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। যার ফলে ২৩ জানুয়ারি বিকাল পাঁচটার দিকে এবং পরবর্তীতে রাত আটটায় ইপিজেড থানাধীন বিভিন্ন কারখানার দুইশো থেকে আড়াইশো জন শ্রমিক শেলটেক ইঞ্জিনিয়ারিং নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে ঢুকে কনস্ট্রাকশন শ্রমিকদের ঘর ও বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর করে। এসময় তারা সেখানে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ রাত দশটায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ইপিজেড এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক আছে।
তিনি আরও জানান, যেই তিন জন শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিল সেই তিনজন শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করেছে। বর্তমানে তারা অভিভাবকের জিম্মায় আছে।
এই তিনজন শিশু হলেন, রবিউল হাসান, মো. হাসান ও মো. সাগর। তাদের সবার বয়স ১০-১২ এর মধ্যে। তারা মূলত নানাস্থান থেকে বিভিন্ন ধরণের ভাঙারি জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করেন। ওইদিন ভোরে সেই ভবনে তারা বোতল, লোহার টুকরা, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র কুড়াতে গিয়েছিলেন। শিশু রবিউল হাসান বলেন, আমাদের ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমি একটু বয়সে বড় হওয়াতে আমাকে কারখানাটির ভবনের ভেতরে নিয়ে অনেকক্ষণ বেঁধে রাখে রশি দিয়ে।হাত-পা বেঁধে ফেলায় আমি নড়তে চড়তে পারছিলাম না। এরপর স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে আনে।
মো. হাসান বলেন, ভোর ছয়টায় আমরা সেখানে বোতল কুড়াতে যায়। এসময় ৩ জন কালো কোর্ট পরিহিত লোক আসে। তারা আমাদেরকে কিছু বুঝার আগেই মারধর শুরু করে। এমনকি মাথায় তুলে আছাড় দিয়ে দেয়। আর রবিউলকে নিয়ে চলে যায়।
সাগরের বাবা মো. সোহেল বলেন, তাদেরকে জবাই করে ভবন নির্মাণের পিলারের মধ্যে মাথা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু পরে জেলা দেখা যায়, তারা সুস্থ আছে। তাদেরকে ইপিজেডের শ্রমিকরা উদ্ধার করে।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রইছ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে কোন রকম মিথ্যা প্রচারণা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের ক্ষতি করা যাবে না, রাষ্ট্রের ক্ষতি মানে আমাদের সকলের ক্ষতি। ইপিজেড আমাদের সকলের সম্পদ। সুতরাং গুজবে কান দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করবেন না। দেশ এবং রাষ্ট্র বিরোধী কিছু দুর্বৃত্ত চক্র যারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারনার মাধ্যমে শিল্পখাতকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে আসুন আমরা সকলে মিলে তাদেরকে প্রতিহত করি। আমরা সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করি এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ব্রতী হই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: [email protected]
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.