মতামত:
ছবির মানুষটি সম্পর্কে দু'চার কথা লিখার ইচ্ছে বহু দিনের৷ কিন্তুু কারণে-অকারণে ওনাকে নিয়ে কলম ধরার সাহস, সুযোগ হয়নি, হয়না। লেখার ব্যেকুলতা এজন্য যে একটি সত্যের উন্মোচন আজও হয়নি। সেই সত্যটা যে এবার জানাতেই হবে। কখনও উপযুক্ত সময়, কখনও উদারতার নিষেধ, কখনও উপলক্ষ্যের অভাবে লেখা হয়নি সেই সত্য। সৈয়দ মাহবুবুল হক বাহালুল। মাহবুবুল হক নামেই ওনাকেই সবাই চেনেন-জানেন। তিনি একসময় সীতাকুণ্ডের এসিল্যাণ্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) ছিলেন। ২০১৯ সাল ওনাকে পুরোটাই পেয়েছি। ২০২০ সালের মার্চে উনি বদলি হন। সীতাকুণ্ডে যোগদান করেই এ উপজেলার ভূমি সেবায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনলেন এই ব্যক্তি। সবাইতো হতবাক এ কোন এসিল্যাণ্ড এলো সীতাকুণ্ডে? এতো ভালো এসিল্যাণ্ড যে এর আগে উপজেলাবাসীর কপালে জুটেনি। তিনি কি করলেন? কেন তিনি দ্রুত জনপ্রিয় হলেন? আসুন জানা যাক সেই গল্প। মাহবুবুল হক সাহেব পুরো ভূমি অফিসের ভেতরে বাইরে নানা রকম দিকনির্দেশনা লিখে দিলেন নিজে দাঁড়িয়ে। নিজের কক্ষের বাইরে লিখলেন এসিল্যাণ্ডের দরজা আপনার জন্য সবসময় খোলা। বাইরে দালালদের জন্য কড়া সতর্কবার্তা। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। কোনদিন কৃষি জমির মাটির কাটার বিরুদ্ধে, কোনদিন বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে, কখনও বা বাজার দর নিয়ন্ত্রণে। কখনও অশ্লীল, বেহায়াপনার বিরুদ্ধে। আবার কখনও মাদক, ইভটিজিং, অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে। প্রায়সময় তিনি পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে যেতেন। তার সময়কালে জরিমানা, দণ্ড থেকে বাদ যায়নি কোন অপরাধী। থরথর করে কাঁপতেন অনিয়মকারীরা। সবার একটাই কথা তাড়াতাড়ি এসব বন্ধ করো এসিল্যাণ্ড মাহবুব সাহেব আসছে। ক্রিমিনালদের মনে এই ভয় তিনি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। বদৌলতে অপরাধের স্বর্গরাজ্য সীতাকুণ্ডের বাসিন্দারা অনেক অনাচার থেকে রক্ষা পেলো। বন্ধ হয়ে গেলো ইউনিয়ন ভূমি অফিস শুরু করে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্য। সরকারি ফি দিয়ে সহজে সবাই নামজারী পাচ্ছেন দ্রুততম সময়ে। কোন টাকা পয়সার লেনদেন নাই। অসাধুদের ধান্ধা একদম বন্ধ। মিছ মামলা, নামজারী কোন ফাইলে অবৈধ লেনদেন হতো না। সরাসরি সেবাগ্রহীতার সাথে কথা বলতেন তিনি। সমস্যার কথা শুনতেন গভীর মনোযোগ সহকারে। এরপর ন্যার্য্য সমাধান দিতেন। শুনানী শেষে ন্যায়বিচার পাওয়ার পাশাপাশি বাদী-বিবাদীদের মধ্যে ভবিষ্যতে যেন কোন ঝগড়া না হয় সেজন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতেন। ওনার কথাগুলো শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যেতো। এরপর দ্বিতীয়বার একই সমস্যা নিয়ে কেউ আর আসতে হতো না উপজেলায়। কমে যেতো মামলার জটও। এভাবেই তিনি সীতাকুণ্ডে এসিল্যাণ্ড হিসেবে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সৎ, সাহসী একজন মানুষ সৈয়দ মাহবুবুল হক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া করেছেন। একজন পরহেজগার, দ্বীন ইসলামের খাদেমও বটে তিনি। সরকারি চাকরী ফাঁকে নিজের মেধা, মননকে কাজে লাগাতেন দ্বীন ইসলামের কল্যাণে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের মুসলিমের কাছে তিনি কোরআনের আহ্বান নিয়ে যেতেন। ঢুকিয়ে দিতেন পরকালীন জিন্দেগীর ভয়। তিনি আমাদেরকে উপজেলার ভেতরে নামাজের সময় ঘুরাঘুরি করতে দেখলে নামাজে ডেকে নিতেন। আযানের সময় তিনি ছুটে যেতেন জামাতে। ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন না। পায়ে হেঁটে অফিসে যেতেন। তার সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান ছিল উত্তম আখলাক ও পরকালীন জীবনের ক্যারিয়ার গঠন। এমন অনেক গুণ আছে ওনার যা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি কারো অবৈধ তদবির নিতেন না। তিনি তদবির পছন্দ করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন সরকারি সেবা অনায়াসেই পাবার অধিকার সকল বাংলাদেশী নাগরিকের রয়েছে। কাউকে তদবির করতে হচ্ছে মানেই সেখানে সেবা ঠিকঠাক নেই। এসব কাজের জন্য তিনি সীতাকুণ্ডবাসীর হৃদয়ের মণিকৌঠায় স্থান করে নেন। কিন্তুু তা সহ্য হয়নি ' র'এর এজেন্ট, ইসলাম বিদ্বেষী, ভারতীয় স্বার্থান্বেসী অপ-সাংবাদিকতা চক্রের। ওই চক্র দপ্তরে দপ্তরে অবৈধ, অন্যায় আবদার নিয়ে হাজির হতো। আর ভয় দেখাতো প্রভাবশালী পত্রিকায় একযোগে সংবাদ করে দেওয়ার। দাঁড়ি-টুপিওয়ালা অফিসার দেখলেই তারা ওঠেপড়ে লাগতো তাকে বিদায় করতে। তারা সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত পোড়া সন, আর গরীবকে মেরে অবৈধ তদবির করতেন। করতেন সরকারি জমি অন্যায়ভাবে ভোগ করার অনুমতির তদবিরও। এসিল্যাণ্ড মাহবুব সাহেব প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরও তদবিরও রাখতেন না। তিনি সাফ জানিয়ে দিতেন এটা অন্যায় এবং বেআইনী। আমাকে দিয়ে এই কাজের সাক্ষর হবে না। আমার অফিস থেকে চলে যান দয়া করে। সেখানে ওইসব অপ সাংবাদিকের বেআইনী তদবিরতো রাখার প্রশ্নই আসেনা। তেমনিভাবে একদিন তদবির সফল করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন এক কট্টর সাম্প্রদায়িক, পেইড-হলুদ দিল্লীর দালাল সাংবাদিক। দিনদিন তার স্বার্থান্বেসী চক্রের সদস্যরা বরাবরই ক্ষুব্ধ হতে থাকেন এসিল্যাণ্ডের উপর। তারা হায়েনার মতো উৎপেতে থাকে ওনার পেছনে লাগার। আমার সাথে প্রায়সময় ওনার কথা হতো। তিনি একবার মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরিয়ে আমাকে বললেন, মনির...ভাই আমার দেখো, আমি যদি অন্যায় না করি নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন। কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। একবার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে তিনি সরকারি কাজে গেলেন। সেখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা ক্লাস না করে মেয়েদের নিয়ে বাজে সময় নষ্ট করছে এমন অভিযোগ ছিল ওনার কাছে। পুরো সীতাকুণ্ডের পরিবেশ তখন নষ্ট। স্থানীয়রা হতাশ। ওনি গুলিয়াখালী গিয়ে একজন কলেজ ছাত্রকে হাতেনাতে তাবুতে ধরে ফেলেন। পরে তাকে কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ছেলেটা ও মেয়েটা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে চলে যায়। এসিল্যাণ্ডের সাথে থাকা এক অসাধু অস্থায়ী কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্য চালাতে না পেরে যিনিও ওই চক্রের মতো ক্ষুব্ধ। সেই অসাধু একটি ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলেন চক্রের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। এই ছবি দিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সেই ক্ষুব্ধ চক্র। তারা তিলকে তাল বানিয়ে প্রথম সারির (ফ্যাসিবাদ আমলের প্রথম সারি) পত্রিকায় সংবাদ করে দেয় "পর্যটকের চুল কেটে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট!" যা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট প্রতিবেদন। কেননা ওই ছেলে কোন পর্যটক নয়। তার বাড়ি ছিল সীতাকুণ্ডে। সে সীতাকুণ্ড কলেজের ছাত্র। এছাড়াও সেদিন কোন চুল কাটার ঘটনা ঘটেনি। এরপরও ওইসময় কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া (ঘটনার সাক্ষীদের বক্তব্য নেওয়ার পরও) ওনাকে বদলী করা হয়। ফলশ্রুতিতে সীতাকুণ্ডবাসী আগের মতোই ঘুষ দিয়ে নামজারির জগতে ফিরে যায়। তার ভালোবাসায় তাকে বদলীর প্রতিবাদে সেসময় স্থানীয়রা মানববন্ধনও করে। সবাই তাকে সীতাকুণ্ডে বহাল চায়। কিন্তুু ঈমানের পরীক্ষা যে বড়ই কঠিন। ওই সাংবাদিকের মিথ্যা রিপোর্টের কারণে একটা ভালো মানুষ অনেক বছর বঞ্চিত হয়। কথায় বলে না, রাখে আল্লাহ, মারে কে? আল্লাহ ঠিকই ওনাকে এখন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বানিয়েছেন। লাখো শুকরিয়া। এর আগে তিনি কয়েকটি উপজেলায় সফলতার সাথে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তুু এরপর অনেক এসিল্যাণ্ড এলো-গেলো। অনেক অনিয়ম, ঘুষের ঘটনা ঘটল। বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হলো। কিন্তুু সেই সাংবাদিককে আর কখনও এসব অনিয়ম চোখের সামনে হতে দেখেও কলম ধরতে দেখলাম না। এতেই বুঝা যায় তিনি কতো বড় তথ্য সন্ত্রাসী।
অন্যায় তদবিরকারী চক্র হয়তো জানেনা
পরিশ্রম, সততা, সৎ সাহস, দেশপ্রেম, ন্যায়-নীতি এই শব্দগুলো যার জীবনের পরতে পরতে লেগে থাকে তাকে কখনও দমানো যায় না। কখনও মিথ্যা, তথ্য সন্ত্রাস দিয়ে তার সাময়িক ক্ষতি করা যায় হয়তো। কিন্তুু সত্যের বিজয় একদিন আসেই, আসে। শুভকামনা প্রিয় সৈয়দ মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, (এডিএম) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
লেখক: এম কে মনির
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী
সভাপতি: সীতাকুণ্ড যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: somoyernews24office@gmail.com
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.