আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমিকদের অবদান অবিস্মরণীয় : ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেছেন, বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন থেকে চব্বিশের গণ অভুত্থানে সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছে এদেশের শ্রমিকরা। আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমিকদের অবদান অবিস্মরণীয়। তারা রক্ত দিয়ে এই দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি ও ইতিহাস নির্মাণ করেছে। তাই অবশ্যই এই দেশে শ্রমিকদের মূল্যায়ন থাকতে হবে।

তিনি আজ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও পুস্তুক প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আমার দেশের চট্টগ্রামের আবাসিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, দৈনিক কর্ণফুলী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ ও সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জামান হেলালী । এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের মহানগর সহ-সভাপতি মকবুল আহমদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাব উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ নূর নবী, প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার ও কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, শ্রমিকরা এদেশের অর্থনীতির কারিগর। একই সাথে শ্রমিকদের এদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে। যে সব ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের তাহজিব তামদ্দুনের সাথে যায় না। তা পরিহার করতে হবে। একটি মহল বিভিন্ন কৌশলে আমাসেদর সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়। তাদের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকতে হবে। শহিদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে বিগত আঠারো বছরে এই দেশের মানুষ কথা বলতে পারেনি। শ্রমজীবীরা তাদের অধিকার পায়নি। অথচ বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ একজন শ্রমিক। আবার চব্বিশের সর্বশেষ শহিদও একজন শ্রমিক। তাদের আত্মত্যাগকে আমাদের ধারণ করতে হবে। এই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। এই ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমাদেরকে জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবে এসব ষড়যন্ত্রে পা দেওয়া যাবে না। পতিত স্বৈরাচার সরকারকে ফিরে আসতে দেওয়া যাবে না। আজকে যারা শুধু নিজেরা ক্রেডিট নিতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আন্দোলনে কার কী ভূমিকা দেশবাসী জানে। এখন ক্রেডিট ভাগাভাগি করে নিজেদের দুর্বল করবেন না। চোখ থাকতে আপনারা অন্ধের ভূমিকা পালন করলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। সুতরাং আসুন দেশ ও জাতির সাথে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই সমৃদ্ধির পথে।

জাহিদুল করিম কচি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচার সরকারের অত্যাচার ও নির্যাতনের কবলে থেকে গণমাধ্যম কর্মী হতে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা কেউ রেহায় পায়নি। আমরা চাকরি হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের পত্রিকা বন্ধ করেছে। সম্পাদককে প্রথম জেলে পরে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। কিন্তু আমরা রাজপথ ভুলে যাইনি। আমাদের ১৬ বছরের রাজপথের লড়াইয়ের ফসল হিসাবে জুলাইয়ের অভুত্থান ঘটেছে। আমরা দেখছি নতুন করে আবার ষড়যন্ত্রের জাল বুনা হচ্ছে। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের হুশিয়ার করে বলতে চাই, আমরা আন্দোলন সংগ্রাম থেকে অবসরে যাইনি। তাদের সকল চক্রান্তের জবাব আমরা ঐক্যবদ্ধ দিতে প্রস্তুত আছি।

মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস একটি বিরল ঘটনা। ইতোমধ্যে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ১৯২০ সালে ‘অবিভক্ত ভারতের রাষ্ট্রভাষা’ আন্দোলন সম্পর্কে জাতিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ৪৭ সালের পরে আবুল কাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিএস গোলাম আজম ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন। অথচ তাঁদের কে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আসমান ও জমিনের মাঝে অনেক নিদর্শন রেখেছেন। এসব নিদর্শনের মাঝে মানুষের ভাষা একটি অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মানুষের মুখে নানা ধরনের ভাষা দিয়েছেন। অথচ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী আল্লাহর সেই নিদর্শন কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে গিয়ে তারা আজ দুর্দশায় পতিত হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম আজম ও বীর চট্টলার সন্তান আবুল কাশেম ভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন। অথচ তাদের আজকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। অথচ যিনি এই আন্দোলনের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না তাকে সকল ক্রেডিট দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে সকল চক্রান্ত রুখে দিবো।

সভাপতির বক্তব্যে এস এম লুৎফর রহমান বলেন, শ্রমিকরা যে আশা আকাক্সক্ষা নিয়ে বায়ান্ন’র আন্দোলন-স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই আকাক্সক্ষা আমরা আজও পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু চব্বিশের বিপ্লব পরবর্তীতে জানিয়ে দিতে চাই, এবারের বিপ্লব আর ধূলিসাৎ করতে দিবো না। আমরা যেমন শ্রমিকদের অবদান ও আত্মত্যাগকে স্মরণ করব ঠিকইভাবে তাদের অংশগ্রহণে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।