চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলে বছর পর বছর পরিচালিত হয়ে আসা দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি "জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিবেশের ধোঁয়া তুলে বারবার এ শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আর এসবের প্রতিবাদে অবশেেষে এ শিল্পের ব্যবসায়ী-শ্রমিক সবাই রাস্তায় নেমে এসেছেন।
ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা এগারোটায় উপজেলার ভাটিয়ারী বাজারে সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ, সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প প্রতিনিয়ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। এই শিল্প এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত। তা সত্ত্বেও এই শিল্পকে নিয়ে নেতিবাচক অভিযোগ আর মিথ্যা অপবাদে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। এসকল কারণে পুরানো জাহাজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এর পাশাপাশি যে সকল জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের জন্য আনা হচ্ছে সেগুলো আমদানীকৃত জাহাজের বিচিং এবং কাটিং পারমিশন সহজে মিলছে না। এসব সনদ পেতে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অহেতুক মাসের পর মাস ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফলে ইয়ার্ড (জাহাজ ভাঙ্গা কারখানা) গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকছে। শিল্পটি সংকটে থাকলে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার এবং বেকার হতে থাকবে এই শিল্পের সাথে জড়িত লক্ষাধিক প্রমিক।
সাম্প্রতিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী (টিবিএস), ৩০ হাজার কোটি টাকার এই শিল্প প্রতিবছর সরকারকে ১৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব দেয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চার করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নানা অজুহাতে এই শিল্পের টুটি চেপে ধরার পাঁয়তারা চলছে বহুদিন ধরে। অথচ সরকারের আইন মেনেই এই শিল্প হংকং কনভেনশনের (জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে পরিবেশসম্মত ও নিরাপদ বজায় রাখার আন্তর্জাতিক আইন) আলোকে গ্রীন শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। সাতটি শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড ইতোমধ্যে গ্রীণ ইয়ার্ড হিসেবে সনদ লাভ করেছে। আরো ১০টি ইয়ার্ড গ্রীন সনদ পেতে প্রস্তুত। বাকীগুলোও গ্রীন ইয়ার্ড হিসেবে সনদ পেতে কাজ করছে।
এই শিল্প গত এক যুগের অধিক সময় ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিরাপদ ও পরিবেশ সম্মতভাবে এই শিল্পের উন্নয়নের কাজ করেছে। সরকার ২০১৮ সালে হংকং কনভেনশন রেটিফাইও করেছে। এই শিল্পকে গ্রীন শিপ রিসাইক্লিং হিসেবে উন্নয়নের জন্য মালিকদের খরচ হয়ে গেছে হাজার কোটি টাকার বেশী। আর এখন যদি বলা হয় এই শিল্পের পরিবেশগত মান মোটেও উন্নতি হচ্ছে না তাহলে সেটি হবে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র। শুধু শ্রমিক নয়, এই শিল্পের বেকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ নানা ব্যবসার সাথে জড়িত আছে হাজার হাজার ব্যবসায়ী। আর তাদের উপর নির্ভরশীল তাদের পরিবার এবং তাদের কর্মচারীরাও। সীতাকুণ্ডের প্রত্যেকটি মধ্যম ও নিম্ন আয়ের পরিবার এই শিল্পের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। সীতাকুণ্ডের মানুষের জন্য এটি আশীর্বাদ।
জাহাজ ভাংগা শিল্প হতে পাওয়া যায় উন্নত মানের লোহাসহ শতাধিক রকম পণ্য। যেগুলো প্রাণ সঞ্চার করছে দেশের ইস্পাত শিল্প থেকে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ব্যাংকিং বা রপ্তানি বাণিজ্যের মতো অন্তত ৮টি খাতে। এই শিল্পকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ১ লাখ কোটি টাকার অর্থনীতি। অন্ধকার অধ্যায় আর হতাশার গল্প ছাপিয়ে এই খাত এখন বলছে সম্ভাবনা আর রূপান্তরের গল্প। আর এমন সময়ে পরিবেশ প্রতিবেশের দোহায় দিয়ে এই শিল্পকে বন্ধ করতে যেকোন ষড়যন্ত্র সীতাকুণ্ডের মানুষ জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ব্যবসায়-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও পুরাতন জাহাজের ফার্ণিচার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, পরিষদের সদস্য সচিব ও শিপ ব্রেকিং শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মম্মদ জাবেদ, পরিষদের সদস্য মোঃ নবী, মোঃ খালেদ মঞ্জু, শেখ সাহাব উদ্দিন, মোঃ নছিম, মোঃ ছালামাত আলী, মোঃ মইন উদ্দিন, মোঃ আজিজুর রহমান, মোঃ শাহ জামান, মোঃ সাহাব উদ্দিন, মোঃ আলমগীর, মোঃ শফিকুল আলম, মোঃ নাজিম উদৌলা, মোঃ মোজাহের আলম। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সীতাকুণ্ড পাইপ বাবসায়ী কল্যাণ সমিতি, পুরাতন জাহাজের ইলেকট্রিক সমিতি, সীতাকুণ্ড পুরাতন জাহাজের ইলেকট্রিক ক্যাবল সমিতি, ভাটিয়ারী নব জাগরণ মেটাল, শীতলপুর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, শাপলা বাবসায়ী সমবায় সমিতি, রশি দোকান মালিক সমিতি, শীতলপুর ইউনিটি সংসদ, জেনারেল ষ্টোর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, সীতাকুণ্ড শীপ ব্রেকিং ওয়েল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, কোল্ড ষ্টোর, কিচেন রুম সমিতি, পুরাতন জাহাজের ফার্নিচার সমিতি, পুরাতন জাহাজের হার্ডওয়্যার মালিক সমিতি, দোকানদারী ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সদস্যরা।
ব্যবসায়ী ও শ্রমিক কর্মচারীদের দাবী, তারা জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশী যে কোন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অবসান চান। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প রক্ষার জন্য সকল অন্তরায়-সমস্যাবলী নিরসনসহ সরকার তথা-বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগীতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বাঁচলে এ শিল্পের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হাজার হাজার শ্রমিক বাঁচবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরও তরান্বিত হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: somoyernews24office@gmail.com
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.