স্থানীয়দের ক্ষোভ, প্রশাসনের নীরবতা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধ, রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও নির্যাতনের এক জটিল চিত্র উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, রাজনৈতিক দাপট ও প্রশাসনিক সংযোগকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি পরিবার বছরের পর বছর ধরে জমি দখল, জাল দলিল তৈরি, দোকান দখল এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদের ভাষ্য মতে, আকিলপুরের বোয়ালিয়াকুল এলাকার রফিকের দুই ছেলে—আমজাদ হোসেন ও কামরুল হোসেন—দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। একসময় উপজেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি নিজেকে ছাত্রদল নেতা হিসেবে দাবি করা শুরু করে আমজাদ হোসেন। আর কামরুল হোসেনও বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা পরিচয় দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বলয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। দুজনই এই কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সাল থেকে কামরুল হোসেন ও তার পরিবার ভূমি অফিসে প্রভাব খাটিয়ে নূর মোহাম্মদের ২ শতাংশ ৫০ পয়েন্ট জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্যদের কাছে সহায়তা চাইলেও পরে দেখা যায়, বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে উল্টো নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও ১৮ ডিসেম্বর—দুটি দিনে নূর মোহাম্মদকে মারধরের ঘটনা ঘটে, যার একটিতে তাকে স্থানীয় বাজারে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। দোকান তালাবদ্ধ করে জীবিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নূর মোহাম্মদের দাবি, তিনি একাধিকবার সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেছেন, অভিযোগ দিয়েছেন ডিআইজি কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত, কিন্তু প্রতিকার পাননি। বরং যেসব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তিনি ন্যায়বিচার চেয়েছেন, তারাই নাকি কামরুলের পক্ষ নিয়ে হয়রানি করেছেন।
স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে এ ঘটনায়। একাধিকবার মানববন্ধন ও পোস্টারিং হয়েছে কামরুল হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অস্থায়ীভাবে কর্মরত থেকেও জাল সনদ, নকল দলিল এবং জমি ক্রয়-বিক্রয়ের নামে অনিয়মে জড়িত। উল্লেখযোগ্য কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও কামরুল আজ দালানকোঠার মালিক। তার বিরুদ্ধে হয়েছে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন। তার ইন্ধনে একাধিক হানলার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন দিক থেকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওরা কখনো ছাত্রলীগ, কখনো ছাত্রদল। তাদের আদর্শ নেই, আছে শুধু স্বার্থ। রাজনীতিকে ব্যবসা বানিয়েছে।”
অন্যদিকে, কামরুল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি কারো দোকানে তালা মারিনি, কাউকে মারিনি।”
তবে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কাজী সেলিম বলেন, “কামরুল আমাদের সাবেক নেতা। সে ভালো ছেলে। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সঠিক তদন্ত হোক।
স্থানীয়ভাবে অভিযোগের পাহাড় জমলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নূর মোহাম্মদের মতো সাধারণ মানুষ আজ ব্যবসা হারিয়ে, বাড়ি ছাড়িয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জমি রক্ষা, বিচার পাওয়া এবং স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার আশায় তিনি এখনো অপেক্ষায়। নুর মোহাম্মদ বলেন, গ্রাম্য জমিজমার সমস্যা হলেও বিষয়টিকে ঘিরে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে তাকে মিরসরাই থানার মামলায় আসামি করা হয়েছে। এখন তিনি পলাতক আসামি। স্ত্রী, সন্তানদের কাছ থেকে বহুদূরে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: [email protected]
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.