
পেকুয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদ উল্লাহর অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং প্রধান শিক্ষককে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্ব্যবহার ও শিক্ষা কার্যক্রমের মান নিম্নগামী হওয়ায় তারা এ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. আলী মিয়াকে মারধর ও তার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর ১২টি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক বিশেষ ক্লাস করানো, রেজিস্ট্রেশনের নামে অর্থ আদায়, জরিমানার নামে টাকা নেওয়া, ভর্তির ফরম বিক্রি করে আত্মসাৎ,
শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক বন্ধক রেখে টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, একটি কুচক্রী মহল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এর আগেও একাধিকবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, যা মূলত পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রধান শিক্ষক জাহেদ উল্লাহ বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্কুল পৌঁছি। এসময় দেখি বিদ্যালয়ের সামনে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ব্যানার নিয়ে জড়ো হয়ে আছে। আমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান দিতে থাকে তারা। মুল ফটকে তালা ঝুলানো। বিদ্যালয়ে ঢুকার চেষ্টা করলে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। মব সৃষ্টি করে আলী মিয়া নামের স্কুলের এক কর্মচারীকে মারধর করে। পরে পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে তালা খুলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চলছে। একটি মহল রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকে দিচ্ছে।এর আগেও অন্তত পাঁচবার এভাবে আন্দোলন হয়েছে। পরিচালনা কমিটি নিয়েও দ্বন্ধ চলছে। কয়েক শিক্ষাকও ষড়যন্ত্রে জড়িত। সব মিলিয়ে আমাকে অপসারণের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারী দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পারভিন সোলতানা, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন জানান, আমরা কোন কথা শুনতে চাইনা, আমাদের এক দাবী প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই। প্রধান শিক্ষক জাহেদ উল্লাহ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাঁর অপসারণ দাবীতেই আমরা আন্দোলন করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আসলে আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমাদের সন্তানদের বিপদগামী করা হচ্ছে। একটি চক্র সন্তানদের ভুলভাল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামার বাধ্য করছে। আমরা সন্তানদের নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি।
অভিভাবকদের দাবি, দ্রুত এ সংকট নিরসন না হলে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর এম এ বলেন, আজকের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। খবর পেয়ে স্কুলে গিয়ে দেখি কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে। পরে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া যুক্তিক বিষয়গুলো দেখে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তালা খুলে দেয়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান চাই।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাঈনুল হোসেন চৌধুরী জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হচ্ছে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়া চক্রের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।