
প্রণয় দাশ গুপ্ত শিমুল :
সনাতনীদের বিভিন্ন পুজা পার্বণের জন্য দেশের সকল হিন্দুদের কাছে চট্টগ্রাম সারা বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটা বিভাগ।দূর দূরান্ত থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন পূজা দেখতে চলে আসে দেশের নানা বিভাগের লোকজন। সনাতনীদের প্রায় হাজার বছরের পুরনো কয়েকটি বড় বড় তীর্থস্থানের অবস্থানও এই চট্টগ্রাম বিভাগে। তার মধ্যে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ
পাহাড়,আদিনাথ মন্দির ও বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ে মেধসমুনির আশ্রম শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বে খুবই সুপরিচিত, জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ তীর্থস্থান। সনাতনীদের বিভিন্ন দেবদেবীর আধ্যাত্মিক স্থান ও বিভিন্ন সাধু সন্ন্যাসীদের সাধনার জায়গা এগুলি।
বারো মাসে তের পার্বন পূজা খ্যাত সনাতনীরা সকল দেবদেবীর পূজা করলেও সারা বিশ্বে সনাতনী বা হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা এবং এই পুজো তাদের সবচেয়ে বড় আবেগ । আর সেই দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল মূলত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের মেধসমুনির আশ্রমে।বলা হয় সেখানে কয়েক শত বছর আগে সর্বপ্রথম সনাতনীদের বড় দেবদেবী রাম সীতা মা দুর্গা দেবীর প্রথম পূজা করেছিল।
আর সেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত অতি সুপরিচিত ধোরলা মুক্তি সংঘ সর্বজনীন দুর্গা মন্দির। যেটি দক্ষিণ জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এই সুপরিচিত ক্লাবটি চলতি বছরের ২০২৫ এ পা রেখেছে ৭১”বছরে। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছর সংগঠনটি আয়োজন করেছে ছয় দিনব্যাপী দুর্গাপূজা।
প্রতিবছর তারা বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপি দুর্গাপূজা পালন করলেও তবে এই বছর ক্লাবের ৭১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তারা পুজোর আয়োজন করেছে ৬ দিনব্যাপী।এ বছর তাদের পূজার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে “মা বিশ্বরূপার বিশ্বরূপ দর্শন। প্রতিবছর এই সংগঠনের ঘটা করে করা বর্ণাঢ্য আয়োজন দেখতে পূজাতে নামে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ঢল। এই সংগঠনটিতে পুজোকে কেন্দ্র করে আলাদাভাবে তৈরি করা হয় স্বেচ্ছাসেবক কমিটি। যে কমিটি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করে যায়। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ, ইউএনও ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা থাকে খুবই আন্তরিক।
শুধু মুক্তি সংঘ নয় এবারও বোয়ালখালীর প্রত্যেকটি দূর্গা পূজার মন্ডপে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের নিরাপত্তা জোরদার করেছে।পূজাতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের যেন কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য গঠন করা হয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি। প্রশাসনের সব কিছু সবসময় তদারকি করছে বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসক। নিরাপত্তা নিয়ে বোয়ালখালী সনাতনী সমাজ খুবই নিশ্চিন্ত রয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রত্যেক পূজা মন্ডপের সদস্যরা দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বোয়ালখালীতে মোট ১৬৭ টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। আর বোয়ালখালীর এই ১৬৭ টি পূজার মধ্যে সবসময় ভিন্ন ধারার আয়োজন করে থাকে ধোরলা মুক্তি সংঘ।১৯৫৪ সালে বোয়ালখালীতে সৃষ্ট ধর্মীয় এই বৃহৎ সংগঠন এইবার তাদের একাত্তর বছর পূর্তিতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৬ দিনব্যাপী পালন করবে এই দুর্গাপূজা। পূজার প্রথম দিন ষষ্ঠীতে তাদের প্রথম ভিন্ন দ্বারার আয়োজন ঢাকের তালে ধুনুচি নাচে মাতৃবরণ অনুষ্ঠান।আর একে একে এভাবে থাকবে তাদের ছয় দিন ব্যাপি বিভিন্ন বর্ণাঢ্য আয়োজন।যে আয়োজনগুলো দেখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে দর্শনার্থীদের।
মুক্তি সংঘের পূজা মন্ডপে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের পিপাসা মেটানোর জন্য পূজা কমিটি ব্যবস্থা রেখেছে ফ্রিতে মিনারেল পানি,গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ও ক্লান্তি দূর করার জন্য বসার জায়গা।মুক্তি সংঘ ক্লাবের এবারের দুর্গা দেবীর পূজা শুধু বোয়ালখালী নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচাইতে বড় পূজা দাবি করছে ধোরলা মুক্তি সংঘ ক্লাব পূজা কমিটি র সকল সদস্য সদস্যবৃন্দ।