গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলাবাজ রশিদের ১৮ তম মামলা এবার আসামী হলেন আমার দেশ’র দুই সাংবাদিক

গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ১৮ তম মামলা করেছেন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামলাবাজ ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ। এবার আসামী করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস ও স্টাফ রিপোর্টার এম.কে মনিরকে। এর আগে তিনি দৈনিক প্রথম আলো, নয়া দিগন্ত, যুগান্তর, মাছরাঙা টিভি, দৈনিক আজাদীসহ অসংখ্য গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ১৭ টি মামলা করেছেন। চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা জানান, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন আব্দুর রশিদ।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট ষষ্ঠ আদালতে তার পক্ষে মামলাটি করেন কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্সের সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম (৪৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদের আইনজীবী কপিল উদ্দিন নিজে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৪ নভেম্বর ‘’চসিকের উদ্যোগে ১৫ ভবন ভাঙার উদ্যোগ, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা ‘’ শিরোনামে আমার দেশ পত্রিকার প্রিন্ট ও অনলাইনে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে চসিকের একটি সড়ক সম্প্রসারণ ও যানজট নিরসন প্রকল্পে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন আব্দুর রশিদ। কারণ এই ভবনগুলোর পেছনে একটি বিরোধপুর্ণ জমি তার দখলে রয়েছে। এই ভবনগুলো ভাংতে পারলে তার জমিটি উন্মুক্ত হবে। ব্যাক্তিসার্থে চসিকের প্রকল্প সংক্রান্ত নিউজে ইঞ্জিনিয়ার রশিদের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন করলে এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করলেও তিনি বক্তব্য দেননি।
অথচ সংবাদ প্রকাশের পরদিনই দৈনিক আমার দেশ’র আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস ও স্টাফ রিপোর্টার এমকে মনিরের হোয়াটসঅ্যাপে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান রশিদের আইনজীবী। একদিন পরই প্রকাশিত সংবাদে শতকোটি টাকার মানহানি হয়েছে দাবি করে আদালতে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় সাক্ষী করা হয় তারই প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মচারীকে।
মামলাবাজ, ভুমীদস্যু ও নদী খেকো হিসেবে পরিচিত আবদুর রশিদ। ভুয়া এসব মামলা দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ভিতি ছড়াতে চান তিনি। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে করা এসব মামলার নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য ও শিরোনাম যুক্ত করে পিডিএফ ফাইল করে রাখেন তিনি। কেউ তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু করলে ওই ফাইল তার কাছে পাঠিয়ে মামলার ভয় দেখান। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রামের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচির কাছেও এমন একটি ফাইল পাঠান তিনি। যেখানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও মামলা করার তথ্য রয়েছে। এছাড়াও ২০০৩ সালে একুশে পদকের জন্য পাওয়া প্রাথমিক সুপারিশের একটি কপিও পাঠান তিনি। রশিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেই উকিল নোটিশ ও মামলা দায়েরের জন্য একটি প্যানেলও প্রস্তুত থাকে বলে প্রচার করেন তিনি নিজেই।
এদিকে আমার দেশের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন। প্রেসক্লাবের পক্ষে বিবৃতি দেন ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি আর সিএমইউজের পক্ষে বিবৃতি দেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ। পৃথক বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ভূমিদস্যু, রাঘববোয়ালরা প্রকৃত বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের আদালতের বারান্দায় নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। অবিলেম্বে ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে তার এই উদ্দেশ্যে প্রণোদিত , বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও জানান সাংবাদিক নেতারা।