মোস্তফা কামাল পাশা সাহেব তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতা। তিনবারের সাবেক এমপি। ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানও। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। সন্দ্বীপের এই আসনটিতে জয়ী হয়ে আসার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য তাঁর আছে। আমার ধারণা এসবকিছু বিবেচনা করেই নমিনেশনটা দেওয়া হয়েছে ওনাকে। তবে সন্দ্বীপের বিএনপির তরুণ সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিলো হয়তো ভিন্ন কাউকে দেখবে দলের প্রার্থী হিসেবে। ভোটও দিবে হেঁসে হেঁসে। প্রায় দেড় যুগ পর সত্যিকারের ভোটের আয়োজন হচ্ছে দেশে। তাই, একটা ভিন্ন রকম আবেগ কাজ করে সবার। বড় দল হিসেবে বিএনপির কর্মী-সমর্থকও বেশি। প্রত্যেকের আবার পছন্দের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই যাদের পছন্দের মানুষটি নমিনেশন পেলোনা তারা আশাহত হয়েছে। বিশেষ করে দলীয় তরুণ নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে এমনটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকের ভাবনায় ছিলো, নতুন কাউকে দেওয়া হবে। তাই, আশায় বুক বেঁধে ছিলো অনেকে। তবে দলের হাইকমান্ড তো আর এসব নিয়ে ভাবেনা। তারা আসন টিকানোর চিন্তা করবে। এটাই বাস্তবতা।
অন্যদিকে কামাল পাশার বিপরীতে এখন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নম্বর একে আছেন জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী আলাউদ্দীন সিকদার।এমপি প্রার্থী হিসেবে কামাল পাশার তুলনায় অভিজ্ঞতা কম হলেও সিকদার সাহেবের যোগ্যতা নেহায়েত কম নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থনীতি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করা এ রাজনীতিবিদ জামায়াতের সাংগঠনিকভাবে অনেক বড় নেতা; চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর(সভাপতি)। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখারও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরেট ভদ্র মানুষ এবং সজ্জন রাজনীতিবিদ। সবসময় হাসি-খুশী থাকেন। ইতিমধ্যে সন্দ্বীপের প্রায় প্রত্যেক ভোটারের কাছে তিনি পৌঁছে গেছেন। ডোর টু ডোর জনসংযোগ করছেন। জনসম্পৃক্তও হচ্ছেন ধীরে ধীরে। ওনাকে এ ব্যাপারগুলা এগিয়ে রাখবে। দিনশেষে জনগণের কাছে যাওয়া লাগবেই। জনগণকে যে আপন করে নিতে পারবে, সেই তো টিকে যাবে। নাকি?
সিকদার সাহেব পড়াশোনা জানা লোক। চলনে ও বলনে যথেষ্ট স্মার্ট। ওনার বাবাও ছিলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। ভোটারদের কাছে এগুলা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখেই অনেকে ভোট দেয়। আগামী দিনের যে রাজনীতি, সেখানে প্রতীক নয় বরং প্রার্থী দেখে ভোট দেওয়ার একটা আলাপও চলছে। এসবকিছু বিবেচনায় নিলে দাঁড়িপাল্লা প্রতীককে বেঁছে নিতে পারে অনেকে। আমার কাছে মনে হয়, প্রার্থী হিসেবে তরুণরা আলাউদ্দীন সিকদারকে এগিয়ে রাখবে। কেননা, নতুন কাউকে দেখতে চায় তরুণরা। নতুনত্ব আসলে সন্দ্বীপের সামগ্রিক উন্নয়নেও নতুন মাইলফলক যুক্ত হবে বলে মনে করছে অনেকে। সেক্ষেত্রে, তরুণদের ভোট যে ক্যাশ করতে পারবে সে এগিয়ে থাকবে। সিকদার কিংবা কামাল যিনিই এটা করতে পারবেন তিনিই জয়ী হবেন। কেননা, তরুণ ভোটাররা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুবই সিগনিফিক্যান্ট ভূমিকা পালন করবে। আমার মতে তারাই হবে আসন্ন নির্বাচনের খেলা পরিবর্তনকারী প্রভাবক। পাশাপাশি অনেক তরুণ ভোটার ফেমিলির অন্যান্যদেরকেও প্রভাবিত করবে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে। ফেমিলি মেম্বারদের ম্যানিফুলেট করে ফেলার ক্ষমতা তরুণদের আছে। এটাও বিরাট একটা ফ্যাক্টর কিন্তু। সন্দ্বীপের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হলো তরুণ। এরা ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারে।
তবে, ধানের শীষের প্রার্থী কামাল পাশার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে আমি সম্মান জানাই। ওনি সন্দ্বীপের ইতিহাসে অনেক বড় মাপের একজন রাজনীতিক। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে হয়েছেন সাংসদ। খুব একটা সহজ বিষয়না এটা। তাঁর বর্ণাঢ্য এ রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই। জীবনের পড়ন্ত বেলায় জনগণ ওনাকে কতটুকু মূল্যায়ণ করে, সেটা সময়ের সাথে সাথে পরিলক্ষিত হবে হয়তো। সময়ের উপরই ছেড়ে দিলাম সে আলাপ।
দিনশেষে, সবার রাজনীতির মূল এজেন্ডা হয়ে উঠুক সন্দ্বীপের উন্নয়ন। আর সন্দ্বীপ হয়ে উঠুক সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনীতি চর্চার অনন্য নিদর্শন। সে ব্যাপারে সকল দলের নেতারা আন্তরিক থাকবেন বলে বিশ্বাস করি।