দেবীদ্বারে নির্বাচন সহিংসতায় ৪ পুলিশসহ আহত ৩০,নারীসহ গেফতার-১২

এ আর. রুহুল আমিন হাজারী, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ দেবীদ্বারে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতায় বড়শালঘর ও ইউছুফপুর ইউনিয়নে বিজয়ী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ; বাড়ি-ঘরে হামলা- ভাংচুর- লুটপাট, ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’ ৬ ঘন্টা অবরোধ করে রাখা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেবীদ্বার থানা পুলিশের সাথে মুরাদনগর, বাঙ্গরা বাজার, বুড়িচং, ব্রাক্ষণপাড়া থানা পুলিশ ও ৬০জন রিজার্ভ পুলিশসহ প্রায় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সড়ক অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে মাইকিং পরে মৃদু লাঠিচার্জ পরে বিপুল পরিমান ফাঁকাগুলি, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রায় ৪ পুলিশসহ অন্তত: ৩০ জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যানাগাদ ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের অভিযানে হামলায় নেতৃত্বদানকারী আলম হাজারী মেম্বার ও ২নারী সহ ১২জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায় এসকল ঘটনায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাঁধাদান এবং পুলিশ এসোল্টের অভিযোগে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২মহিলাসহ ৪১জন নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৯শতজনকে অভিযুক্ত করে ও বড়শালঘর ইউনিয়নের ছোটশালঘর গ্রামের মোঃ শাহজাহান সরকার বাদী হয়ে মেম্বার আলম হাজারীকে প্রধান আসামী করে ৩৮জনকে নামে এবং অজ্ঞাতনামা ৮০জন এবং অপর ঘটনায় ইউছুফপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের ইউনুছ মিয়া বাদী হয়ে ২২জনকে নামে এবং ১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে পৃথক ৩ মামলায় ১ হাজার ৯৩ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে গতকাল বিকেল থেকে ছোটশালঘর গ্রাম প্রায় নারী-পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুরে উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ছোটশালঘর গ্রামের বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী আলম হাজারী পক্ষে ঢোলবাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে মিছিল করার সময় হঠাৎ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী সাবেক মেম্বার মোঃ ফরিদ উদ্দিন সরকারের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। সংবাদ পেয়ে পাশ্ববর্তী ইউছুফপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে ২ মেম্বার প্রার্থীর দাঙ্গা নিয়ন্ত্রনে থাকা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হামলায় নেতৃত্বদানকারী নবনির্বাচিত মেম্বার আলম হাজারী ও তার ছোটভাই শাহজাহান হাজারীকে আটক করা হয়।
আলম হাজারীকে আটকের ঘটনায় তার সমর্থক কয়েকশত নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ছোটশালঘর এলাকায় ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’ অবরোধ করে তাদের মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। পুলিশ তার শক্তি বৃদ্ধিতে প্রায় ৬০জন রিজার্ভ পুলিশ ও পাশ্ববর্তী থানাগুলো থেকে আনা পুলিশসহ প্রায় শতাধিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পুলিশ প্রথমে মাইকিং এবং মৃদু লাঠি চার্জে নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হয়ে ফাঁকাগুলি, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেট নিক্ষেপ করে এতে বিক্ষোভকারীদের নারীসহ প্রায় ২৫/২৬জন রাবার বুলেটে এবং লাঠি পেটায় আহত হন। অপর দিকে বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ৪ পুলিশ আহত হন। দিন ব্যাপী পুলিশ জনতার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকারে  ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র উভয় পাশ্বের শত যান ও মাল পরিবহন আটকে পরে।
আহতদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে ভর্তি করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, আহত পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এসআই) জহিরুল ইসলাম, কনষ্টেবল মফিজুল ইসলাম ও কনষ্টেবল মৃত্যুঞ্জয় বর্মণকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অপরদিকে আলম হাজারীর সমর্থক বুলেট বিদ্ধ শিপন হাজারী ও তাছলিমা বেগমকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ইউছুফপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত উভয় পক্ষের আবুল কালাম, মাসুক, শাহীন ও নূরে আলমকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও বাকীদের দেবীদ্বার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছোটশালঘর গ্রামের আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যাক্তি সেল ফোনে জানান আলম হাজারীর পক্ষ থেকে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর ফরিদ উদ্দিনের বাড়িতে মিষ্টি পাঠালে মিষ্টিদাতা তামিম ও হোসেন নামে দু’সমর্থককে মারধর করার সংবাদে আলম হাজারীর বিজয় মিছিলে থাকা লোকজন ওই বাড়িতে হামলা চালায়।
বড়শালঘর ইউনিয়ন পরিষদেরবর্তমান চেয়ারম্যান ও পরাজিত প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম জারু ভ‚ঁইয়া জানান, আমার সমর্থক আলম হাজারীসহ অসংখ্য সমর্থককে পরিকল্পিতভাবে হামলা- মামলায় জড়ানো হয়েছে। দেবীদ্বার থেকে শালঘর যেতে এক ঘন্টা সময় লাগে সেখানে ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ উপস্থিত হল কিভাবে ? পুলিশ নির্বিচারে আমার সমর্থকদের পিটিয়ে রাবার বুলেটে আহত করেছে।
অপর ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকাল ১০টায় ইউছুফ পুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। বিজয়ী মেম্বার আনোয়ার’র বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পাশ্ববর্তী
বাড়ির পরাজিত মেম্বার প্রার্থী সাবেক মেম্বার আবুল কালাম’র সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে আবুল কালাম ও তার সমর্থক মাসুক, শাহীনসহ ৫ সমর্থক আহত হন। অপর দিকে বিজয়ী মেম্বার আনোয়ার’র সমর্থক নাজমুল, নূরে আলম, বোন শাহানা আক্তার সহ ৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও গত ২দিনে উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে ঘর-বাড়ি, দোকান, খড়ের পাড়ায় আগুন, ভাংচুর, হামলা, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় আলম হাজারী মেম্বারসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বড়শালঘর এবং ইউছুফপুর এলাকায় বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা এবং পুলিশের কর্তব্যকাজে বাঁধাদান এবং ৪ পুলিশ এসোল্টের ঘটনায় থানায় ৩ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।