
মো. তাসলিম উদ্দিন সরাইল, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): সরাইলে কৃষকের বোরো ধান চাষে সবুজ প্রকল্পের পানি প্রবাহের খালের প্রতিপদে বাধা? আশুগঞ্জ পলাশ-অ্যাগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) পানি ধীরগতি কারনে ক্ষতির মুখে পড়েছে সরাইলের ১০ হাজার হেক্টর জমি। এই এলাকার কৃষকের একমাত্র ভরসা সবুজ প্রকল্পের পানি।পানি না পাওয়ায় অনাবাদি রয়েছে কৃষকদের জমি। সরাইল উপজেলার বোরো ধান চাষ হুমকিতে পড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলছে দুই বছর যাবত। এ জন্য মহাসড়কের পাশের বিএডিসির পানি প্রবাহের খালটি বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। যার কারনে আশুগঞ্জ পলাশ-অ্যাগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) পানি সময়মতো ছাড়া সম্ভব হয়নি। এতে সরাইল উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।এ এলাকায় সরকারের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষকরা।
জানা যায়,সম্প্রতি সেচের পানি সমস্যা নিরসনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো.শাহগীর আলম বিএডিসির খাল পরিদর্শন করেছেন।বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে এবং ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর থেকে বিএডিসির তত্তাবধানে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যপানি রেগুলেটরের মাধ্যমে গতিপথ পরিবর্তন করে এ এলাকায় কৃষকদের জমিতে নামমাত্র মূল্যে সেচ সুবিধা দেয়া হয়। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশের খালে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৬৭কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে দুই বছর ধরে।এছাড়া অধিকাংশ জমিতে বোরো চারা রোপন করা সম্ভব হয়নি। এখন সকাল বিকেল জমি খালের পানির অপেক্ষায় স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়,সরাইল উপজেলার,পানিশ্বর ইউনিয়নের খড়িয়ালা হতে বেড়তলা পর্যন্ত পানির ধীরগতি দেখতে পাওয়া যায়। খালের প্রায় জায়গায় ময়লা ও বালুর কারণে পানি গতি কম হচ্ছে। সরাইল সদর ইউনিয়ন কুট্টাপাড়া, সৈয়দটুলা, নিজসরাইল, উচারিয়াপাড়া, চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর, চুন্টা, বড়বল্লা, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ, বারিউড়া, শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর ও দীঘিরপাড় এলাকার কোনো জমিতে পানি পৌঁছতে দেখা যায়নি।এদিকে সময় মতো চারা রোপণের করতে না পারায় বীজতলার চারাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষক পড়েছে বিপাকে!
স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাজার হাজার একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে ইরি- বোরো চাষ করি, এখন যদি খালে পানি না আসে তাহলে আমরা ধান চাষ করবো কিভাবে? শুনতেছি পানি নাকি সারছে, তবে পানির কোন গতি নাই। খালের জায়গায় বালু আবার বিদ্যুতের হাম্বা আছে। এখন যা অবস্থা দেখতেছি পানি আইতে পদে পদে বাধা ! তবে এলাকার কৃষকের কথা চিন্তা করে সেচ প্রকল্পটি চালু রাখবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।পানিশ্বর ইউনিয়নের খড়িয়ালা গ্রামের কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার হাজার বিঘা জমি এখনও অনাবাদি। এসব জমি আদৌ আবাদ হবে কিনা তা অনিশ্চিত। কালকে ধরে দেখতেছি একটু পানি আইতাছে ফাইব ডুবে না। আর মেশিন চলেনা কালকে থেকে জমিতে পানি দেওয়ার জন্য খালের দিকে সাইয়া আছি! পাঁচ দিন ধরে ম্যানেজারের পিছনে ঘুরতেছি ফুটবল ডুবেনা আর পানিও উঠে না -?
একইভাবে নোয়াগাঁও এবং শাহবাজপুর ইউনিয়নের শত শত বিঘা জমি পানির অভাবে এখনও রোপণ করতে পারেননি কৃষকরা।সরাইল সদর কুট্রাপাড়া স্কিম ম্যানেজার মো. মাহফুজ মিয়া জানান,তার স্কিমের জমি রোপণের পানি পাননি। কৃষকেরা জমিতে আরো একমাস আগে পানি দেওয়ার কথা। এখনো খালে পানি আসার খবর নাই। আমরা স্কিম চালাইয়া সংসার চলে। এলাকার কৃষকদের অবস্থা এখন অনেক খারাপ চারা প্রায় নষ্টের পথে।ফলে পানির জন্য তিনি কৃষকদের দিক থেকে খুব চাপে রয়েছেন বলে জানান।
সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন।এই পর্যন্ত সেচের কোন সমস্যা হয়নি।মহাসড়ককে চার লেন করার কারনেই সরাইলের হাজার হাজার কৃষকের জমিতে পানি বন্ধ হয়ে গেছে। আজ দেখলাম পানি একটু একটু চলতেছে তবে পানি চলা অব্যাহত রাখলে হাজার হাজার কৃষকের জীবন রক্ষা হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিবান্ধব সরকার।সরাইল উপজেলা পরিষদ ভাইস- চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ মিয়া বলেন, এখন পানি চালু হয়েছে। তবে জায়গায় জায়গায় বালুর কারণে পানির গতি কম। গতকালও আমরা সরাইলে ইউএনও মহোদয় কে নিয়ে রাত পর্যন্ত কাজ করেছি। যেখানে যেখানে পানি বাধা হচ্ছে সেই জায়গা পরিস্কার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই পানির সমস্যা নিয়ে কিছুদিন আগেও ডিসি স্যার পরিদর্শন করেছেন।
সরাইল উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন, বিভিন্ন জায়গার প্রতিবন্ধকতা সারিয়ে পানি সরাইল পর্যন্ত পৌঁছানের জন্য চেষ্টা করছি। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে দুটি এস্কেভেটর কাজ করছে যেখানে বাধা হচ্ছে সেখানে পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ চলমান রয়েছে আশা করছি কৃষকের ১০হাজার হেক্টর জমি বোরে আবাদ সমস্যায় পড়বে না। উল্লেখ থাকে যে,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ- আখাউড়া চার লেন সড়কে উন্নীতকরণের চলমান কাজের ফলে ওই এলাকার আশুগঞ্জ পলাশ-অ্যাগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) খালে বালু- ময়লা ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে সরাইলে সেচ প্রকল্পের পানিসংকট এখন ধীরগতি পানির চলাচল। এতে সরাইল উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান চাষ হুমকিতে পড়েছে।