পত্নীতলা ( নওগাঁ ) প্রতিনিধি: স্বপ্ন ছিলো আমি একজন ক্রিকেটার হবো। বাবা-মা, আত্নীয়- স্বজন তথা পত্নীতলাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করবো। এই আশা বুকে বেঁধে হাজারো অভাব অনটন কে উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম। আমি খুব ভালো ক্রিকেট খেলতাম। আমি বি.কে.এস.পি তে আবেদন করেছিলাম এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষাও দিয়েছিলাম আরো কিছু পরীক্ষা বাঁকি ছিলো । আমার আত্নবিশ্বাস ছিলো আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবো। এলাকায় বড় - ছোট ভাইয়েরা আমাকে বিভিন্ন জায়গাতে দাওয়াত করে নিয়ে যেতো খেলার জন্য। কিন্তু হঠাৎ একদিন মুহূর্তের মধ্যে আমার সব স্বপ্ন মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় একটি দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনার দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার ১০ জুন ২০২১ সাল। বন্ধুরা এসেছিল জাম খাবার জন্য। তাদের কে জাম খাওয়ানোর জন্য গাছে উঠে জাম সংগ্রহ করতে শুরু করি। হঠাৎ একটি ডাল ভেঙ্গে পাকা উঠানে পড়ি। পড়ার সাথে সাথে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু দাঁড়াতে পারিনি। বন্ধু ও প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে আমাকে স্থানীয় নজিপুর সদর হাসপাতালে নেয়। ডাক্তার বেশ কিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা দেয়। কিন্তু এতো দামি দামি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার মতো টাকা আমার ছিলোনা। আর থাকবেই বা কিভাবে যার নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। সেই সময় পাশে পাইনি বাবা কে। বাবা তো ব্যস্ত তার অন্য পরিবার কে নিয়ে। আমরা অন্যের জায়গাতে টিন দিয়ে ঘর তৈরী করে কোন রকম থাকি। কে আমাকে দিবে এতো টাকা? আমি পত্নীতলা খাদ্য গুদামে ঝাড়–দার হিসাবে কাজ করে যা টাকা পাই তা দিয়ে মা ও দুই ভাই কে সাথে নিয়ে সংসার চালাই। বন্ধু ও পাড়া প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে দেখি আমার কোমরের ইস্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে যায় ও বাম পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা খরচ প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা। কোথায় পাবো আমি এতো টাকা? বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে ছিলাম ৩৭ দিন। ভেবেছিলাম আমি আর কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারবো না, হাঁটতে পারবো না। ঠিক সেই সময় আমার পাশে এসে দাঁড়ায় পউস নামের একটি সামাজিক সংগঠন। পউস এর ভাইয়েরা এসে আমাকে সাহস দিয়ে বলে, ”অন্তর তুমি চিন্তা করোনা, তুমি আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে, হাঁটতে পারবে , আগের মতোই জীবন যাপন করতে পারবে, তোমার চিকিৎসার দায়িত্ব আমরা নিলাম”। তারপর অপারেশন হলো। এখন আমি হাঁটতে পারি, আমার কর্মস্থানে টুকটাক কাজও করতে পারি। এসব কথা বলছিল আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো শ্রী অন্তর কুমার।
অন্তর কুমার নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার পত্নীতলা ইউনিয়নের পত্নীতলা খাদ্যগুদাম পাড়ার গনেশ জমাদারের দ্বিতীয় ছেলে।এবিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা সমিতি ( পউস ) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো: হাবিব সাত্তি বলেন, আমরা আমাদের এক ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে অন্তরের খবরটি পাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের একটি টিমকে পাঠানো হয় অন্তরের খোঁজ খবর নেবার জন্য। খোঁজ খবর নেবার পরে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি অন্তরের চিকিৎসাতে এগিয়ে আসবো।অপারেশনসহ যাবতীয় খরচ হয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। অপারেশনের আগে আমরা অন্তরের প্রতিবেশী , আত্নীয়- স্বজন ও পত্নীতলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হেলাল উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। আমরা অন্তরের অপারেশন করাই। আলহামদুলিল্লাহ্ অন্তর এখন অনেকটাই সুস্থ্য। পউস এর পরিশ্রম সফল। সে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে। কিন্তু কষ্ট একটি জায়গায় রয়ে গেলো - আমরা পত্নীতলাবাসী একজন তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার হারালাম।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: [email protected]
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.