সময়ের নিউজ ডেস্কঃ ঘরে-বাইরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে দিশেহারা সুনামগঞ্জ ও সিলেটের মানুষ। বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জের পর সিলেটও এখন সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলার বেশির ভাগ হাসপাতালে পানি ঢুকে যাওয়ায় জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতেও সমস্যা হচ্ছে। পানিবন্দী এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই এখন বন্যাকবলিত মানুষের জন্য বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন লাখো মানুষ। বিপদ আরও বাড়াচ্ছে টানা বৃষ্টি। গতকাল শনিবারও অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত ছিল। প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
রেলস্টেশনে পানি ওঠায় সিলেটের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উপকেন্দ্র তলিয়ে গতকাল দুপুরে সিলেটের পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, খাদ্যগুদাম থেকে শুরু করে টিঅ্যান্ডটি অফিস-জরুরি সেবা দেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান তলিয়ে আছে পানির নিচে। সিলেটের কিছু এলাকায় মুঠোফোন নেটওয়ার্কও অকার্যকর, বন্ধ ইন্টারনেট সেবাও। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি দল গতকাল পানির কারণে সিলেট শহরে ঢুকতে না পেরে ঢাকায় ফিরে এসেছে।
সিলেটের স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সরকার বানভাসি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দিলেও যোগাযোগ-বিড়ম্বনার কারণে এসব সহায়তা সব জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার পানির কারণে অনেক এলাকা দুর্গম হয়ে পড়েছে। ফলে অসহায় ও বিপর্যস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছে। এমনকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। মূলত নৌকা ও জলযানের সংকটের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে সিলেট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার কয়েকটি উপজেলা এবং সিলেটের কিছু এলাকার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না দেশের অন্য প্রান্তে থাকা মানুষেরা। আত্মীয়স্বজনেরা কে কীভাবে আছেন, সে খোঁজ নিতে না পারায় তাঁরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে পুরো জেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদরের সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি উপজেলাও এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশু ও পাখি। নৌকার সংকটে মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজেও খুব একটা যেতে পারছেন না।
আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবন সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সব বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চেনা-অচেনা মানুষ গাদাগাদি করে কোনোরকমে দিন পার করছে। যেখানে ১০০ মানুষ থাকার কথা, সেখানে কয়েক শ মানুষ ঠাঁই নিয়েছে। অনেকে শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। স্থানীয় হাটবাজার তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খাবার কিনে এনে খাওয়ার সুযোগও নেই। অন্যদিকে মোমবাতির সংকটে সন্ধ্যার পর অনেক আশ্রয়কেন্দ্র পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক সেবাদানে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক হাসপাতাল বিদ্যুৎহীন থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগীয় কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ০১৭১৬২৬০২১১ এবং ০১৭১৫৫০০৮৩৯ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বন্যা পরিস্থিতির জন্য খবরাখবর রাখছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগের জন্য ০১৭৫৯১১৪৪৮৮ নম্বরে ফোন করা যাবে। এসব নম্বরে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ করা যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ আবু সাহিদ। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: রাশেদা ম্যানশন, ৯৮৬, মধ্যম রামপুর হালিশহর, চট্টগ্রাম | যোগাযোগ: 01869-600700, E-mail: somoyernews24office@gmail.com
Powered by somoyernews.com | Designed by F.A.CREATIVE FIRM LTD.