প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ২:০২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৪, ২০২২, ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

ফারহান সিদ্দিক ,সীতাকুণ্ড : একদিকে বিশাল পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র বিস্তৃত প্রকৃতির সুন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলীয়াখালী সমুদ্র সৈকত। সেখানে সবুজ ঘাসের চাদরে ঢেকে থাকে সৈকত, মাঝে মাঝে ছোট ছোট গর্ত যেন এই এই সৈকতের ভিন্নতা এনে দিয়েছে । মাটির আঁকাবাঁকা ভাঁজে ভাঁজে পানির দোলা। তপ্ত রোদে পর্যটকদের শীতল ছায়া দেয় ম্যানগ্রোভ বনের গাছগাছালি। মনোমুগ্ধকর এ সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন গুলিয়াখালীতে। তবে এখানে এসে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা।
সিএনজি অটোরিকশা ও বোটের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া এবং পার্কিং ভাড়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে গুলিয়াখালীতে যাওয়া পর্যটকদের। শুধু তাই নয়, গুলিয়াখালীর কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে ফেরার পথে পুকুরে হাত-পা পরিস্কার ও গোসল করতেও দিতে হচ্ছে টাকা।
পর্যটকদের অভিযোগ, গুলিয়াখালীতে যাওয়ার পথে সীতাকুণ্ড নামার বাজার থেকে গুলিয়াখালী পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২’শ থেকে আড়াইশ’ টাকা। পানি, ধুমপান, চিপস, বিস্কিট, নাস্তা, ভাত, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবকিছুতে নেয়া হচ্ছে বাড়তি দাম।
ঈদের ছুটিতে গুলিয়াখালীতে ঘুরতে আসা মো. ইমতিয়াজ বলেন, ‘গুলিয়াখালীতে এসে পুকুরে পা ধুতে ১০ টাকা দিতে হয়েছে। এটি অমানবিক। পুকুরে নামতে কেন টাকা গুনতে হবে?’ একই কথা বলেন, রাশেদ, ইকবাল, সবুজও। তারা জানান, ৫০ জনের একটি দল নিয়ে গুলিয়াখালী সৈকত ঘুরে ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে ফিরে আসার পথে কৃষি জমিতে বৃষ্টি পানি জমে আছে এমন একটি ছোট পুকুরে গোসল করতে যান তারা। এসময় তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় জনপ্রতি ২০ টাকা। সে হিসেবে তারা গোসল করতেই দিয়েছেন ১ হাজার টাকা।
নেত্রকোনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রাইনা ইসলাম মুন বলেন, ‘সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালীতে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নেয়া হচ্ছে যা ইচ্ছে তাই ।এখানকার সিএনজি অটোরিকশার চালকদের ব্যবহারও খারাপ। তাদের দ্বারা রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে পর্যটকদের। খাবারের রেষ্টুরেন্টে গুলোর সুযোগ বুঝে পর্যটকদের গলা কাটছে। দাম বেশি হলেও তুলনামূলক মানসম্মত নয়।
রাজশাহী থেকে আসা মো. আহসান বলেন, ‘১০ টাকার চিপস ২০ টাকা, ৩০ টাকার ২ লিটার পানি ৪০ টাকা, সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে গুনতে হচ্ছে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। এখানে যেন মগের মুল্লুক। কোন শৃঙ্খলা নেই। যে যেভাবে পারছে হাতিয়ে নিচ্ছে পর্যটকদের কাছ থেকে। এসব অব্যাহত থাকলে পর্যটকরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গুলিয়াখালী সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম সময়ের নিউজকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর খালি গাড়ি নিয়ে চালকদের ফিরতে হয়। এজন্য কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া নেয়। তবে এভাবে বাড়তি ভাড়া নেয়া ঠিক হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি করবো।’
পুকুরের পানি ব্যবহারের জন্য পর্যটকদের পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা মো. রিপন সময়ের নিউজ কে বলেন, ‘আমরা পুকুরে ঘেরা দিয়েছি, তাই টাকা নিচ্ছি। তা না হলে পর্যটকরা পুকুরটা নষ্ট করে ফেলবে।’
পণ্যের অতিরিক্ত দাম আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন দোকানি বলেন, ‘এখানে জিনিসপত্র আনতে আমাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি না করে উপায় নেই। এভাবে বিক্রি না করলে পোষাবে না। ভালো লাগলে নেন, নাহলে নিয়েন না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন যারা হাত-পা ধুতে প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি ব্যবহারে টাকা নিচ্ছেন তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা ভবিষ্যতে এভাবে টাকা আদায় করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম ও গাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি করা হচ্ছে, তারা এসব তদারকি করবেন। গুলিয়াখালীর সবকিছুকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা হবে।’
উল্লেখ্য, অপার পর্যটন সম্ভাবনা থাকায় সম্প্রতি সরকার গুলিয়াখালীকে জাতীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।