
প্রেস বিজ্ঞপ্তি : লাভ লেইন ও নন্দনকানন ছিল একসময় চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। কিন্তু বিগত একদশকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের ভয়াল থাবায় এই এলাকা পরিণত হয়েছে ইট পাথরের বস্তিতে। একের পর এক কাটা হয়েছে গাছ, গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এই মুহূর্তে লাভ লেইনে নির্মিত হচ্ছে কমপক্ষে ২০টি বহুতল ভবন। তন্মধ্যে লাভ লেইনের আবেদীন কলোনীর একেবারে শেষ প্রান্তে
‘এশিয়া আবেদীন রেসিডেন্সি’ নামক ভবনের দুই পাশে দুইটি বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। পূর্বদিকের ভবনটি নির্মাণ করছে ‘কিশলয় ডেভেলপারস লি.’ নামক একটি কোম্পানি। ভবনটি নির্মাণে কোন ধরণের আইন-কানুন মানা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সিডিএ’র ভূমিকা রহস্যজনক। ভবনটির সামনের রাস্তা মাত্র ৮-১০ ফিট চওড়া হলেও ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ তলা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও পরিদর্শক তোফায়েল ইসলামের সাথে যোগসাজশে ভবনটির নকশা অনুমোদন করা হয়েছে ১০ তলার। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বা সিডিএর বিধিমালা অনুযায়ী সামনের রাস্তা ২৭ ফুটের নীচে হলে কোন ভাবেই ৬ তলার উপরে ভবনের অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া দুই ভবনের মাঝে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ন্যুনতম যে জায়গা রাখা প্রয়োজন তার কোন বালাই নেই এখানে। সর্বোচ্চ ১ ফুট দূরত্বে নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটির পিছনে একটি সরকারি খাল রয়েছে। দখল করা হয়েছে খালের জমিও। বাংলাদেশ আর্মি সেখানে লাল পতাকা দিয়ে গেলেও পতাকা তুলে ফেলে খালের কিনারা বরাবর পিলার তুলে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটির সামনে রয়েছে পিডিবির ১১ কেভি লাইন যার থেকে ভবনের নূন্যতম দূরত্ব থাকা উচিত ৫ ফিট। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় ১১ কেভি লাইন থেকে ভবনটির দ্বিতীয় তলার দূরত্ব মাত্র দেড় ফুট। ১০ তলা ভবনটিতে নেই কোন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। অনুমোদন নেয়া হয়নি কোন ফায়ার সেফটি প্ল্যােেনর। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, নন্দনকানন থেকে গত ১২ ফেব্রæয়ারী তারিখে কিশলয় প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে চিঠি দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি ডেভেলপার কোম্পানিটি।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে সেখানে অভিযানে যায় ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় থানা পুলিশ, স্থানীয়কাউন্সিলর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সিডিএ’র কর্মকর্তারা। কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে সেখানে মালিক পক্ষের বা ডেভেলপার কোম্পানির কাউকে পাওয়া যায়নি। সে সময় সকলে মিলে এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ডেভেলপার কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিডিএ’র পরিদর্শক মোঃ তোফায়েল ইসলামকে নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত সিডিএ’র কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমনকি সিডিএ চেয়ারম্যান বরাবরে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগও আমলে নেয়া হয়নি। সম্প্রতি আবারো পুরোদমে কাজ শুরু করেছে কিশলয় ডেভেলপার কোম্পানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই এটার প্রতিবাদ করেছি, বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছি, এখন তো বিল্ডিং নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন আর লাভ কি? সিডিএ’র
পরিদর্শক তোফায়েল সাহেব সব কিছুই জানেন, কিন্তু তিনি নীরব। আমরা নিরীহ মানুষ, এত বড় ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা কি এমন করতে পারব?’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘আমরা দুই দফায় কাজ বন্ধ করেছি, সিটি কর্পোরেশনের খালের জমি দখল হয়েছে বলে আমি স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে ব্যবস্থা নিয়েছি, কিন্তু সিডিএ কেন কোন ব্যবস্থা নেয়নি সেটা আমি বলতে পারব না, তবে আমি মেয়র মহোদয়কে ইতোমধ্যে বিষয়টি জানিয়েছি।’