
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটি সেই জায়গা, যেখানে বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই বিনিয়োগ করা উচিত, কারণ এই মানুষগুলো ইতোমধ্যে অসীম কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন পার করছে।
শুক্রবার উখিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শরণার্থী শিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন। এ সময় গুতেরেসের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি। প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এদিকে ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে সংস্থাটি সম্ভাব্য সবকিছু করবে
পবিত্র রমজান মাসে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান যে তারা যেন শুধু কথায় নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপ ও কার্যকর সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। ঘোষিত অর্থের সহায়তা হ্রাসের কারণে, ২০২৫ সালে মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। এটি সম্পূর্ণ বিপর্যয় হবে।’ তিনি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মানুষ এখানে কষ্ট পাবে, মারা যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে শরণার্থী শিবিরে পৌঁছালে রোহিঙ্গারা হাত নেড়ে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। উভয় নেতা সাদরে হাত নেড়ে তাদেরও অভিবাদন জানান।
জানা গেছে, ইফতারের মেন্যুতে ছিল ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। এই খাবারের তালিকা থেকে স্পষ্ট যে, এই আয়োজনে সাধারণ মানুষ এবং অতিথিদের জন্য সহজ, স্থানীয় ও পরিচিত ইফতার পরিবেশন করা হয়।
ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক ইউনূস ও গুতেরেসকে বহনকারী বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটের দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান।
সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে সংস্থাটি সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
শুক্রবার কক্সবাজারের বালুখালী-১৮ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি যে এটি (সংকট) এড়াতে আমরা সবকিছু করব এবং তহবিল প্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করতে পারে- এমন সব দেশের সঙ্গে আমি কথা বলে যাব।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে যাবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি জানান, (রোহিঙ্গাদের বিষয়ে) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি সোচ্চার হয়ে কথা বলবেন।
গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে আরও সহায়তা প্রয়োজন। (শরণার্থী শিবিরে) এই জনগোষ্ঠীর মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার জন্য এ সহায়তার খুবই প্রয়োজন।’
রোহিঙ্গারা মায়ানমারে ফিরে যেতে চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মায়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারকে সম্মান জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবকিছু করা জরুরি।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আগামীকাল রবিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।