‘পুলিশ গুলি করে পা কেটেছে, অস্ত্র মামলাতেও ফাঁসিয়েছে

পুলিশের গুলিতে পা হারানোর পর সাজানো অস্ত্র মামলায় নয় মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাইফ।

তার অভিযোগ, ২০২১ সালের ১৬ জুন পুলিশ সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে বায়েজিদ লিংক রোড এলাকার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান এবং ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় পায়ে গুলি করা হয়, যার পরিণতিতে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়।

সাইফের দাবি, তৎকালীন এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও একজন সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবের পরিকল্পনায় পুলিশকে ব্যবহার করে তাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।

রোববার সময়ের নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিন বছর আগের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই ছাত্রদল নেতা।

তিনি বলেন, “২০২১ সালের ১৬ জুন বিকালেও আমি সুস্থ-সবল একজন যুবক ছিলাম। অথচ একদিনের ব্যবধানে আমার বাম পা-টি হারিয়ে গেল। ছাত্রদলের রাজনীতি করার এমন পরিণতি হবে, তা কখনও ভাবিনি।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাইফ বলেন, “২০২১ সালের ১৬ জুন সন্ধ্যায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আকাশ নামে একজন জরুরি কথা আছে বলে আমাকে অক্সিজেন মোড়ে ডেকে নেয়। সেখানকার হোটেল জামানে বসিয়ে সে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।”

তার ভাষ্যমতে, সেখান থেকে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ ও হাত-মুখ বেঁধে বায়েজিদ লিংক রোডের একটি নির্জন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাইফের অভিযোগ, সেখানে বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহের অসীম দাশ, এসআই মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, এসআই মো. নুর নবী, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. রবিউল হোসেন এবং সোর্স মো. শাহজাহান ওরফে আকাশ তার কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

“আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। অনেক আকুতি-মিনতির পর পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে দেব বললেও তারা মানেনি। এক পর্যায়ে তারা আমাকে দৌঁড়াতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমাকে মাটিতে ফেলে পায়ে গুলি করে। এসআই ওয়াসিম (মেহের অসীম দাশ) ওসির হাত থেকে শর্টগান নিয়ে আমার পায়ে আরেকটি গুলি করে। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।”

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দেখতে পান বলে জানান সাইফ। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, “তারা আমাকে পঙ্গু করেই ক্ষান্ত হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগেই অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সেই সাজানো মামলায় আমাকে নয় মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে।”

সাইফের দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক আলী এবং একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ।

তিনি অভিযোগ করেন, “কাউন্সিলর মোবারক আলী ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ব্যবহার করে আমাকে পঙ্গু বানানোর পরিকল্পনা করেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার সুযোগকে কাজে লাগানো হয়।”

এই ছাত্রদল নেতা আরও জানান, কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দিয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহযোগিতায় তিনি একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করেন।

ঘটনার পর মামলা করতে গেলে পুলিশের হুমকির মুখে পড়েন বলেও অভিযোগ করেন সাইফ। তিনি বলেন, “থানা থেকে এসআই রবিউল গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে, কোনো আইনি ব্যবস্থা নিলে আমার ভালো পা-টিও হারাতে হবে।”

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি তিনি ছয় পুলিশ সদস্য ও এক সোর্সের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন।