এক ভবনের অনুমোদনে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ,  ফাঁসছেন সিডিএ’র চার কর্মকর্তা

ভবনের নকশা অনুমোদন ও ভূমি ছাড়পত্র দিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চার কর্মকর্তা অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। শুধু তাই নয় ঘুষ না দেওয়ায় ওই কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিককে ফাইল আটকে দিয়ে দফায় দফায় দীর্ঘ দিন ধরে হয়রানি করে আসছিলেন। এমনকি নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে ভবন ভেঙে দিয়ে জরিমানাও করা হয়। অবশেষে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ওই ভবনের নকশা অনুমোদন করে দিলেও চূড়ান্ত অনুমোদন দেননি তারা। এরা হলেন, সিডিএ’র ভূমি ছাড়পত্র বিভাগের সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ (এটিপি) কামাল হোসেন, সহকারী অথরাইজড অফিসার-১ ইলিয়াস আকতার, অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ হাসান ও ডিলিং এসিসিট্যাণ্ট আলমগীর তালুকদার।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সিডিএ ভবনে দুদকের অভিযানে এসব তথ্য ওঠে আসে। দুপুর ১১টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক সায়েদ আলমের নেতৃত্বে চার ঘন্টাব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটির দুই সদস্যের একটি টীম। এসময় তারা সিডিএতে চেয়ারম্যান, প্রধান প্রকৌশলী, সেকশন অফিসার, অথরাইজড অফিসারের দপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং বেশকিছু নথি তলব করেন সিডিএ কর্মকর্তাদের কাছে। অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে সিডিএ থেকে বের হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচারক সায়েদ আলম জানান, হাসান মুরাদ নামে একজন গ্রাহক ভূমি ছাড়পত্রের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন ২০২৩ সালের ২৩ মে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তাকে ভূমিছাত্র দেওয়া হয়। পরে তিনি নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন। গত বছরের মে মাসে তার নকশাটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন হলেও আবেদনের অনুকূলে কোন পত্র জারি করা হয়নি। ফাইলটির অনুমোদনের জন্য হাসান মুরাদ ও তার ভাইকে ব্যাপক হয়রানি করেছেন সিডিএ কর্মকর্তারা। নানাভাবে হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন সময় ফাইল আটকে দেওয়া হয়, ভবন ভেঙে জরিমানা করা হয় এবং কৌশলে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। এ কাজে জড়িত ছিলেন অথরাইজড বিভাগ-১ এর সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ কামাল হোসেন, সহকারী অথরাইজড অফিসার-১ মো. ইলিয়াস আকতার, অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ হাসান। আর সিডিএ’র ডিলিং এসিস্ট্যান্ট আলমগীর তালুকদার বারবার ফাইল আটকে রাখেন। আমরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করেছি।

তিনি আরও জানান, হাসান মুরাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলে সেটিসহ বেশকিছু ভবনের নকশা অনুমোদন ও ভূমির ছাড়পত্র অনুমোদনকে কেন্দ্র করে হওয়া অনিয়ম ধরা পড়ে। কেবল একটি ভবনের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, এখনও এই ফাইলের চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়নি। বর্তমানেও নানাভাবে ঘুষ দাবি করা হচ্ছে ভবন মালিকের কাছে।

এ বিষয়ে সিডিএ’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম জানান,যেই অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সময়কালের। এরপরও কেন নকশাটি অনুমোদন করতে দেরি হয়েছে এবং অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দুদক খতিয়ে দেখবে। প্রমাণিত হলে আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিডিএ’র পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেব। ওই গ্রাহকের সাথে যেই আচরণ করা হয়েছে তা উচিত হয়নি। আমি চাই দুনীর্তিমুক্ত সিডিএ হোক।