চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মাঝ সাগরে ৭২ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে অপহৃত ট্রলারসহ ৪ জেলেকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ জলদস্যূদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে ডাকাত, জলদস্যূ ও বনদস্যূ মুক্ত ঘোষনা করেন। এরই প্রেক্ষিতে সুন্দরবন এলাকায় বসবাসকারী জেলেরা স্বস্তির সাথে সমূদ্রে মৎস্য আহরণ করে আসছে যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং তারিখ বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড পূর্বজোন এর মাধ্যমে জানা যায় কুখ্যাত জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম-হাতিয়া চ্যানেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা জেলেদের ব্যবহৃত কাঠের ট্রলার সহ জেলেদের জোরপূর্বক অপহরণ করে আটক করতঃ মারধর করে জেলেদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তাদের আত্মীয় স্বজন এবং বোট মালিকের নিকট ফোন করে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপন দাবী করছে। সংবাদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জেলেদের জীবনের নিরপত্তা এবং চট্টগ্রাম সীপোর্ট এলাকার দেশী বিদেশী জাহাজের মালামালসহ নাবিকদের নিরাপত্তা চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ এর সম্পর্কৃত।

বিষয়টি র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে এবং এ বিষয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা প্রদানের জন্য র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর গোয়েন্দা বিভাগকে সমন্বিত করা হয়। পরবর্তীতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম, কোস্টগার্ড পূর্বজোন এবং র‌্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা বিভাগের সার্বিক সহযোগীতায় ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। প্রায় ০৩ দিন ধারাবাহিক অভিযানের ফলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ ১৬১৫ ঘটিকায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি চৌকস আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের একটি ভবনের ২য় তলায় অভিযান পরিচালনা করে জলদস্যু ১। মোঃ কামাল (৩৫), পিতা-মনসুর আহমদ, সাং-চর পানাউল্যাহ, থানা-সুবর্ণচর, জেলা-নোয়াখালী, ২। মোঃ নূর নবী (২৬), পিতা-মোঃ মনছুর আহমদ, সাং-মধ্যম ব্যাগ্যা, থানা-সুবর্ণচর, জেলা-নোয়াখালী, ৩। মোঃ শামীম (২৪), পিতা-নুর উদ্দিন মাঝি, সাং- বয়ারচর, থানা-রামগতি, জেলা-লক্ষীপুর, ৪। মোঃ এ্যানি (৩১), পিতা-মোঃ আবুল হোসেন, সাং-বড়খিরি, থানা-রামগতি, জেলা-লক্ষীপুর এবং ৫। মোঃ ফেরদৌস মাঝি (৩৫), পিতা-আব্দুল কাদের, সাং-বড়খিরি, থানা- রামগতি, জেলা-লক্ষীপুরদেরকে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে তাদের দেয়া তথ্য মতে উক্ত ভবনের ২য় তলার ৮নং কক্ষের বাথরুমের ছাদের উপর থেকে ০১ টি একনালা বন্দুক, ০২ টি ওয়ান শুটারগান, ০৩ টি রামদা, ০৩ টি চাপাতি, ০১ টি ধারালো চাকু এবং ০১ টি ক্ষুর উদ্ধার করা হয়। 

এই কুখ্যাত জলদস্যুদের মধ্যে মোঃ কামাল মূলত এই দলটির প্রধান ছিলো। এই কারণেই সে তাদের বাহিনীর সকল অপকর্মের পরিকল্পনা করত এবং উল্লেখিত ঘটনায় ভিকটিমদের আত্বীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদ এর মাধ্যমে টাকা আদায় করত। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ০২ টির ও বেশী মামলা রয়েছে। ধৃত জলদস্যু মোঃ নূরনবী এই ডাকাত দলের বোট এবং পারের টাকা পয়সা আদায় সংক্রান্তে তথ্য আদান- প্রদান ও তাদের খাবার সরবরাহ করত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ০৩ টির ও বেশী মামলা রয়েছে। ধৃত জলদস্যু মোঃ শামীম ভিকটিমদেরকে বোটের মধ্যে আটকে রেখে বিভিন্ন রকম অত্যাচারসহ পাহারা দিতো। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও ডাকাতিসহ একাধীক মামলা রয়েছে। ধৃত জলদস্যু মোঃ এ্যানি অপহরণকৃত ভিকটিমদের অমানবিক নির্যাতন করতো এবং ঐ সময় তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে ফোনের মাধ্যমে আর্তনাদ শুনিয়ে দুর্বল করে মুক্তিপণ আদায়ে কৌশল অবলম্বন করত এবং সর্বশেষ ধৃত জলদস্যু মোঃ ফেরদৌস মাঝি ভিকিটিমদেরকে বোট চালিয়ে সাগর পারের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে সহায়তা করত।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক ২৩৪৫ ঘটিকায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় তৈরী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জি¦ত হয়ে উল্লেখিত ০৪ জন ভিকটিমসহ ০১টি কাঠের ট্রলার বঙ্গোপসাগরের চট্টগ্রাম হাতিয়া চ্যানেলে মাছ ধরা অবস্থা হতে জোরপূর্বক মুক্তিপন আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে। পরবর্তীতে আসামীদের দেয়া তথ্য মতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোড সংলগ্ন সাগর তীরবর্তী বেড়িবাধের নিকট হতে জোরপূর্বক ছিনতাইকৃত বোটের কেভিন হতে ০৪ জন ভিকটিম সহ উক্ত বোটটি উদ্ধার করা হয়।  উল্লেখ্য যে, গত ২১ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে র‍্যাব-৭, চট্টগ্রাম কর্তৃক চটগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কবীর বাহিনীর প্রধানসহ মোট ১৫ জন জলদস্যুকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আটক করে। গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।