
পুলিশী ক্ষমতা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চট্টগ্রাম নগরের বার্মা কলোনীর পাহাড়ে অসহায়, রিফিউজিদের প্লট দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে ভূমিদস্যু মো. ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় তরুনদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে ও গ্রেপ্তার করে হয়রানিও করছেন ওই ব্যক্তি। নিরুপায় হয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশ দিয়েছেন। তারা বলছেন, আইনের তোয়াক্কা না করে রিফিউজিদের জায়গায় জোরপূর্বক বহুতল ভবন করার পাশাপাশি সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন ইউসুফ। এতে এলাকাটি বাস অযোগ্য হয়ে ওঠেছে। প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী বাহিনীর মহড়া দিয়ে সেখানে নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণ কাজ করায় এলাকাটি মরণফাঁদে রুপ নিয়েছে। আতঙ্কে দিন পার করছেন বহু মানুষ।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষ। তারা অবিলম্বে সেখানে ভবন নির্মাণ ও মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধ না করলে টানা আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন।
অভিযু্ক্ত মো. ইউসুফ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর ফকিরপাড়ার এলাকার লালানগর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তবে তিনি বায়েজিদের বার্মা কলোনীতে বসবাস করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বার্মা কলোনী এলাকাটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা এবং এটি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে হাজারো মানুষ চট্টগ্রামের বার্মা কলোনী এলাকায় আশ্রয় নেন। বর্তমানে জায়গাটি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দূর্যোগ শাখা দেখাশোনা করে থাকে। এখানকার প্লটগুলো রিফিউজিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া।
তারা আরও জানাান, ওই এলাকায় কোন বহুতল ভবন করা সম্পূর্ণ বেআইনী। তাছাড়াও এখানে পাহাড় থাকায় ভবন করতে গেলে পরিবেশ ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ে। সেইসাথে পাহাড়ি জীববৈচিত্র্যও সংকটে পড়ে। এজন্য প্রশাসনের অনুমতি ব্যতি রেখে কোন ভবন করা যায় না।
জেলা প্রশাসকের কাছে রবিবার অভিযোগ দায়েরকারী মো. ফাহিম জানান, সেখানকার বেশিরভাগ ঘর-বাড়ী কাঁচা-বেড়া এবং টিনসেড ঘর। প্রাক্তন জেলা প্রশাসক সেখানে কোন ধরণের ভবন নির্মান না করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এমনকি বার্মা কলোনীর ৩৫.১৫ একর জায়গা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তথা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিজস্ব সম্পত্তি। এই সম্পত্তি বিক্রী/হস্তান্তর এবং সেখানে যেকোন ধরণের বহুতল ভবন নির্মাণে নিষেধ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিমত, এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী স্বৈরাচারী দল আ. লীগের কিছু নেতা ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ভবনটি গড়ে তুলছে। বার্মা কলোনী এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছে না। সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছে। ইউসুফের দুই ভগ্নিপতি পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করে। আর তাদের দিয়েই তিনি এলাকার লোকদের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে আসছেন।
জানা যায়, যেখানে ইউসুফ ভবন গড়ে তুলতে চান সেই প্লটটি (ক্রমিক ৫১ ও প্লট নং-৩১) দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মরিয়ম বেগম নামে এক অসহায় নারী বরাদ্দ পেয়েছিলেন। তিনি একজন উদ্ধাস্তু। তার কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ইতিমধ্যে ইউসূফ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সবুজ ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে হয়রানি করতে মামলা দায়ের করেছেন। সবুজকে ওই মামলায় গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, রিফিউজি এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নিব।