ইউপি সচিবগণ আন্তরিক হলে গ্রাম  আদালতের কার্যক্রম বেগবান হবে : উপ-পরিচালক ,বদিউল আলম

প্রেস বিজ্ঞপ্তি : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) বদিউল আলম বলেছেন, গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান থাকলেও তা সঠিকভাবে তদারকি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত ছক অনুযাযী অবহিত না করার কারণে কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত  হচ্ছে। ইউপি সচিবগণ আরও আন্তরিক হলে গ্রাম আদালতের সার্বিক কার্যক্রম বেগবান হবে। বিভিন্ন কারণে মানুষ গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা কোন এক পক্ষের হয়ে কাজ করেন বলেই বিচার প্রার্থীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বাস্তব পরিস্থিতি দেখে ন্যায় বিচার করলে গ্রাম আদালতে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। আজ ২২ মে ২০২২ ইংরেজি রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের অগ্রগতি ও পরিচালনা দিক-নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সভার আয়োজন করেন। সভায় সন্ধীপ, সীতাকুন্ডু, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউএনডিপি প্রতিনিধি, প্রকল্পভূক্ত এলাকার ইউপি সচিবগণ অংশগ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নূর জাহান আক্তার সাথীর  সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাম আদালত কার্যক্রম বাস্তবায়নে  জেলার অগ্রগতি, মাসিক-ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ও গ্রাম আদালত টেকসইকরণে ইউপি  সচিবদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন ইউএনডিপি’র এভিসিবি-২ প্রকল্পের  ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট উজ্জ্বল কুমার দাস চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন (সীতাকুÐ), মোঃ সাব্বির রাহমান সানি  (ফটিকছড়ি), ফাতেমা-তুজ জোহরা (সাতকানিয়া) ও মোঃ শরীফ উল্যাহ লোহাগাড়া)।

সভায় জানানো হয়, দেশের আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ কমাতে এবং দরিদ্র ও  সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির সহজে, কম খরচে, স্বল্প সময়ে, সঠিক বিচার প্রাপ্তিনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে  বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতিকে আরও ফলপ্রসূ করার জন্য আইনী কাঠামোর মধ্যে আনা হয়। কিছু সংশোধনীসহ ২০০৬ সালে অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করা হয়, ২০১৩ সালে আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হয় এবং সবশেষে ২০১৬ সালে গ্রাম আদালত বিধিমালা প্রণীত হয়।

বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনও সকল ইউনিয়ন পরিষদে সমানভাবে গ্রাম আদালত আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় অর্থাৎ গ্রাম আদালত সক্রিয় না হওয়ায় সরকারকে আইনটি কার্যকর করার মাধ্যমে গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। প্রথম পর্যায়ে ২০০৯-২০১৫ মেয়াদে ৩৫১টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। উক্ত প্রকল্পের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও সাফল্যকে সামনে রেখে পরবর্তীতে ২০১৬-২০২২ মেয়াদে ৮টি বিভাগের ২৭টি জেলার ১০৮০টি ইউনিয়নে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয় যা এ জেলায় ৫টি (সীতাকুন্ড, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি ও সন্ধীপ) উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সভায় আরও জানানো হয়, বিভিন্ন কারণে দেশে বিচারিক আদালতে মামলার বিরাট জট তৈরি হয়েছে, যদি দেশে গ্রাম আদালত কার্যক্রম সক্রিয় করা সম্ভব হয় তবে মামলার জট
নিরসনের পাশাপাশি অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষজন বিচারিক সেবা পাবেন, এতে করে সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকবে এবং মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে।

সহযোগিতা ও নথিপত্র ব্যবস্থাপনার জন্য বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে গ্রাম আদালত সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিচারপ্রার্থীদের সাথে কাউন্সেলিং, মামলা গ্রহণ থেকে শুরু করে বিচারিক কাজের প্রতিটি স্তরে ইউপি চেয়ারম্যান বা গ্রাম আদালতকে সহযোগিতা, গ্রাম আদালতের নথি তৈরি ও সংরক্ষণ, গ্রাম আদালতের মামলার প্রতিবেদন তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত সহকারীদের ভূমিকার ফলে
প্রকল্পভুক্ত এলাকায় গ্রাম আদালত উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটের সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রাম আদালতের পেশকারের দায়িত্ব এবং গ্রাম আদালদের নথি ও রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপরেটরদের/ইউপি সচিবদের নিকট ফেব্রæয়ারি ২০২১ এ হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই থেকে ইউপি সচিবগণ গ্রাম আদালতের পেশকারের দায়িত্ব এবং গ্রাম আদালতের নথি ও রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্প থেকে সবাইকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় গ্রাম আদালত বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন/দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, জেলার বর্তমান গ্রাম আদালতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিবদের মধ্যে সুসমন্বয় গড়ে তোলা এবং যার যার অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। একই সাথে গ্রাম আদালতের মাসিক ও ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে নিয়মিত উপজেলা ও জেলায় পাঠাতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ইতোমধ্যে যে জ্ঞান, দক্ষতা অর্জিত হয়েছে তা পরবর্তীতে গ্রাম আদালত পরিচালনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া গ্রাম আদালতের সক্রিয়তা ও গ্রাম আদালতের বিচারিক মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্যে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এ বিষয়ে সকলকে সরকারের নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী
অফিসারগণ নিয়মিত মনিটরিং এর অংশ হিসাবে গ্রাম আদালত কার্যক্রম আলাদাভাবে  গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করবেন। জেলার সকল চেয়ারম্যানগণ যাতে ইউপি সচিবদেরকে

সার্বিক সহযোগিতা করে তার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ প্রযোজনীয় নির্দেশনা প্রদানসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের কারণে সারাদেশের মধ্যে আমরা গ্রাম আদালত কার্যক্রমে এ জেলা ভালো অবস্থানে রয়েছে। গ্রাম আদালতকে যথাযথভাবে কার্যকর করার  মধ্যে দিয়ে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বিশেষতঃ নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির ন্যায়-বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকার পূরণে সহায়তা করার জন্য সভায় উপস্থিত সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ও ইতিবাচক ভ‚মিকা পালনের আহবান জানানো হয়।