ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে সরগরম হচ্ছে মাঠ; স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচনায়

মো. তাসলিম উদ্দিন, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন সামনে রেখে সরগরম ২ উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল- আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে কাউন্টডাউন (ক্ষণ গণনা) শুরু হয়েছে। প্রচার কার্যক্রমের সময় হাতে মাত্র ১৮ দিন বাকি। এখনো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মাঠ উষ্ণ হয়ে উঠছে। এই সময়ের মধ্যে ১৭ ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে যেতে হবে। ১ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যে ভোটাররা ভোট প্রদান করবেন। প্রার্থীদের ঘুমের সময় কমতে শুরু করেছে। তাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্তই অতিমূল্যবান। পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। অর্থাৎ ভোটাররা বেজার হলে ভোটটি পাল্টে যাবে। এবারের ভোট প্রদানে কারচুপির অবকাশ নেই। প্রার্থীরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে যাবেন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) পাঞ্চ করার পর যাবতীয় ঠিকুজি মনিটরে ভেসে উঠবে। তারপর তিনি গোপন কক্ষে গিয়ে প্রতীকের ঘরে বোতাম টিপে এবং ওকে করার পর ভোটগ্রহণ হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া -২ এই প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ করায় অনেক ভোটারের মধ্যে কৌতূহল ও ভাবনা দুইই লক্ষ্য করা যায়। ভাবনা হলো যন্ত্রে ঠিকমতো ভোট প্রদান নিয়ে। নির্বাচন কমিশন আশস্ত করেছে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনে প্রার্থীরা ঘূর্ণিপাকে আছে। ভোটারদের মন ধরে রাখতে না পারলে কি হবে বলা যায় না। উপ-নির্বাচনে প্রার্থী আট। তার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। উপ- নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ সরাসরি প্রার্থী দেয়নি। জাপা প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। বিএনপিও অংশ নিচ্ছে না। ফলে দলীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি মনোনীত ২ প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও এলাকার ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠে এখন আলোচনা চলছে লড়াইটা আসলে হতে যাচ্ছে ২ উপজেলার মধ্যে। প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জনের বাড়ি সরাইলে ও ৩ জনের আশুগঞ্জে।

সরাইল উপজেলা ৯ টি ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা- ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ জন ওআশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ জন।জাতীয় সংসদের ২৪৪ নম্বর আসনটি গঠিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল -আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। উপনির্বাচনে অংশ নিতে গত ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।এরমধ্যে গত শনিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোহন মিয়া মারা যান। রোববার যাচাই-বাছাইয়ের পর আরও ৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে আছেন ৮ প্রার্থী।দুই উপজেলার ভোটার চায়,তাদের নিজ উপজেলা থেকেই এমপি নির্বাচিত হোক।তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির মনোনীত ২ প্রার্থী হলেন আব্দুল হামিদ ভাসানী ও জহিরুল ইসলাম জুয়েল। বাকি ৬ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য এড. জিয়াউল হক মৃধা, বিএনপির দলত্যাগী সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, শাহজাহান আলম সাজু, মঈন উদ্দিন মঈন ও আবু আসিফ আহমেদ। সরাইল- আশুগঞ্জ এলাকার ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,এই উপনির্বাচনে লড়াইটা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই। যদিও এই আসনে দলীয় ব্যানারে যে ২ প্রার্থী নির্বাচন করছেন তারা কেউই ভোটের মাটে শক্তিশালী প্রার্থী নন। তার সাথে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার নাম।প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আছেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য এড.জিয়াউল হক মৃধা,মঈন উদ্দিন মঈন। অন্যদিকে আশুগঞ্জ উপজেলায় আলোচনায় আছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু ও আবু আসিফ আহমেদ। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, এ আসনের অধীনে সরাইল উপজেলার ৯ ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়ন আছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ জন। সরাইলে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ জন,যা আশুগঞ্জের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

প্রার্থীদের মধ্যে সরাইলের বাসিন্দা সংসদ সদস্য ও সাবেক মহাজোট প্রার্থী এড.জিয়াউল হক মৃধা ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু আলোচনায় আছেন। দীর্ঘ ৫০ বছরে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের‌ কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি।আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সী বলেন, দলীয়ভাবে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আমরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.নাজমুল হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের কোন সিদ্ধান্ত এখন পযর্ন্ত পাইনি। দল যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা সেই ভাবে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, এখনও কিছু বলা যাবে না দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৩১২ সংরক্ষিত আসনের সংসদ ও সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলি আজাদ)বলেন, নির্বাচনের আরোও সময় আছে। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার পর দেখা যাবে।