
নিলিয়ান বম, বান্দরবান: বিজ্ঞ জেলা দাযরা জজ স্থগিতাদেশ নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিপক্ষে বাগানে জোর পূর্বক প্রবেশ করে গাছ কাটা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা বাগান মালিকের গাছগুলো কেটে নেওয়ার ফলে প্রায় দেড় লক্ষধিক টাকা ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিকটিম। বান্দরবানে ২নং রুমা সদর ইউনিয়নে রুমাচড় পাড়ায় গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দিন দুপরে সন্ত্রাসীর কায়দায় জোর পূর্বক ও অবৈধ ভাবে প্রতি পক্ষ বাগানে ঢুকে এ গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় হুমকির মূখে দিন যাপন করছেন বাগান মালিক ভিকটিম শৈমংউ মার্মা ও তার সহপরিবারের সদস্য।
স্থানীরা জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে শৈমংউ মার্মা চাষকৃত জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ জমির বিরোধ নিয়ে বান্দরবান বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি মামলা মেদুশে মার্মা ( ৬৯) পিতা থোয়াই প্রু মার্মা পক্ষে রায় হয়। তে শৈমংউ মার্মা (৫০) পিতা সাচিং অং মার্মা নারাজি ও সংক্ষোব্দ হয়ে এই রায়ে বিরোধে বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি মামলা দায় করেন। এতে বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ রিভিশন মামলা নিস্পতি না হাওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বান্দরবান এর মিস সি আর – ৪৯/২০১৭ মামলার বিগত ইংরেজি ২৫/১১/২০২১তারিখে আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতাদেশ করেন।
ভিকটিম শৈমংউ মার্মা অভিযোগ করে জানান মাননীয় বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আমার প্রতি পক্ষ প্রভাবশালী মেদুশে মার্মা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) আমার সৃজিত বাগানে অবৈধভাবে ঢুকিয়ে গাছ গুলো কেটে নিয়ছে। ওই সময় গাছ না কাটতে অনুরোধ করলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমার প্রতি পক্ষ মেদুশে মার্মার লোকজন জোর করে বাগান থেকে কেটে নেওয়ার কারনে আমার দেড় লক্ষ টাকার সমপরিমাণ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং আরও বাগানে থাকা বাকি সব গাছ গুলো কেটে নেয়ার হুমকিও দিয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, মেদুশে মার্মার নেতৃত্বে তার লোকজন কর্তৃক কেটে নেয়া সেগুন গাছ গুলো আমি পরিশ্রম করে প্রায় ২৫/৩০ বছর আগে আমার হাতে এই জমিতে রোপণ করেছিলাম। এ প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখেন ২নং রুমা সদর ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ডে সাংগু নদীর পাড়ে রুমাচড় পাড়া অবস্থিত। পাড়ায় থেকে ১০০-১৫০ গজ দূরত্বে একটি জমিতে কেটে ফেলা বেশ কয়েকটি সেগুন গাছ পরে থাকা দেখা যায়। পরে থাকা গাছ গুলো তিন -চার জায়গায় বেশ কয়েকটি সেগুন গাছ পরে রয়েছে। এসব গুড়ায় কাটা হলেও তখনো ডালপালা গুলো কাটা হয়নি। গাছ কটার এলাকায় ঘুরতে গিয়ে দেখা হয় ভিকটিম শৈমংউ মার্মা সঙ্গে।
তিনি কান্না মুখে বলেন, এ জমিটি আমার। এ জমি থেকে জোর করে সেগুন গাছ গুলো কেটে ফেলা হয়েছে, এসব গাছ আমার। জমিতে পরে থাকা গাছ গুলোর দিকে হাত দেখিয়ে শৈমংউ মার্মা এ প্রতিবেদক কে বলেন এসব পরে যাওয়া গাছ গুলো দুর্লোভ হয়ে মেদুশে মার্মা তার লোকজন নিয়ে গাছ গুলো কেটে দিয়েছে। কথা বলতে বলতে গাছ কাটার দুঃখ কষ্টের অশ্রু ধরে রাখতে নাপেরে কান্না ভেঙ্গে পরেন। তিনি একটি স্থানের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন এ গাছ গুলো কাটা সময় মেদুশে মার্মা লোকজনের সাথে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ছিল। রুমা থানা উপ – পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম নেতৃত্বে ওই সব পুলিশ সদস্যরাও মেদুশে মার্মা পক্ষ নিয়ে গাছ কাটতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ করেন শৈমংউ মার্মা।
রুমা থানার এসআই আতিকুল ইসলাম বলেন গাছ কাটার সহযোগিতা বিষয়টি সত্য নয়। মেদুশে মার্মা রুমা থানা গত ২২/১২/২০২১ তারিখে হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন, যার সাধারন ডায়েরি নং ৭৫৬। সেই প্রেক্ষিতে সরেজমিনে খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলাম। যাতে উভয় পক্ষের মধ্যে আইন নিজের হাতে না নেয়। তবে কারোর পক্ষ পাতিত্ব নেয়ার কথাটি সত্য নয় বলে জানান। ঠিক ওই সময় উপস্থিত হয় শৈমংউ মার্মা প্রতিপক্ষ মেদুশে মার্মা। এই জমিটি নিজের দাবি করে মেদুশে মার্মা বলেন এ জমির বিপরীতে আমার বৈধ দলিল আছে। তাছাড়া এ জমি নিয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থেকে সম্প্রতি একটি মামলার রায় হয়েছে। ওই রায় আমার পক্ষে ছিল। তাই এ জমি আমার। সুতরাং নিজ জমি থেকে সেগুন গাছগুলো বিক্রির জন্য শ্রমিক লাগিয়ে কেটেছি। আপনার প্রতিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালতে আপীল করার পর আদালত থেকে রিভিশন মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই রায়ের আদেশ কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন, তারপরও জোর করে কেন গাছগুলো কেটে ফেলেছেন এ প্রশ্নে মেদুশে মার্মা বলেন আমাদের কাছে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এ ধরণের কোনো নোটিশ আসেনি। অতএব বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায় কপি টি আমার ন্যায়সঙ্গত আসল দলিল। তবে শৈমংউ মার্মা আইনজীবী জিয়াউল মুঠোফোনে বলেন শৈমংউ মার্মা বিপক্ষে মিস সি আর -৪৯/২০১৭ নং মামলার বিগত ২৫/১১/২০২১ তারিখে বান্দরবানের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায়ের আদেশ বিপরীতে শৈমংউ মার্মা মাননীয় বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালত ফৌজদারী রিভিশন ১/২০২২ আনয়ন করলে মাননীয় বিজ্ঞ দাযরা জজ আদালত থেকে রিভিশন মামলা নিস্পতি না হওয়া পর্যন্ত এই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং জেলা দায়রা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করে বাদী সুইমংউ মার্মা সৃজন করা গাছগুলো কেটে নেয়ার বিষয়টি অন্যায় করেছে বিবাদী মেদুশে মার্মা ও তার লোকজন।