
সময়ের নিউজ ডেস্ক: সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও এদেশের নাগরিক এবং সমাজের অংশ। একটি দেশের অগ্রগতির ধারায় সমাজের সকল অংশকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে সে দেশের সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয় এবং অগ্রগতিও বাধাগ্রস্থ হতে বাধ্য। তাইতো ছিন্নমূল এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করাটা অত্যন্ত জরুরি। সে লক্ষ্যেই চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ও আশেপাশের বস্তিতে থাকা অসহায় ও ছিন্নমুল শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার প্রয়াসে পরিচালিত ই-স্কুলের শিক্ষার্থীর মাঝে ইফতার ও ঈদ সামগ্রী সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বিতরণ অনুষ্ঠানে ই -স্কুলের পরিচালক নরেশ্বর দাসের উপস্থাপনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রফেসর মোসলেম উদ্দিন মুন্না এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন সোনালী সন্দ্বীপ ও সোনালী মিডিয়া ফোরামের সাহিত্য সম্পাদক এম এ হাশেম আকাশ। উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে অতিথির বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর মাওলা , ইয়ুথ ক্লাব অব চিটাগাং সন্দ্বীপ এর সভাপতি মাহবুবুল মাওলা, শিক্ষকা সামিয়া সুলতানা, সন্দ্বীপ ব্লাড ডোনার ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা খোদাবক্স সাইফুল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. প্রফেসর মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন তোমাদের যদি ইচ্ছা থাকে লেখাপড়া করার জন্য। ইচ্ছাটা যথেষ্ট টাকা পয়সা দরকার হয় না। ইচ্ছা থাকলে লেখাপড়া করা সম্ভব। লেখাপড়া করার খরচ জোগাড় হয়ে যায়। পৃথিবীতে এরকম বহু নজির আছে এমনকি বাংলাদেশেও বহু উদাহরণ আছে। লেখাপড়া করার টাকা নেই, তবে আজ লেখাপড়া করে অনেক বড় হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডক্টর আতিকুর রহমান। ইচ্ছা থাকলে তোমরাও একদিন বড় কিছু হতে পারবে। তার জন্য তোমাদের যদি ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। এখানে তোমরা যে লেখাপড়া করেতেছ তোমাদের কোন টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে না। এভাবে তোমাদের লেখাপড়া করার জোগার হয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব এম. এ. হাশেম আকাশ বঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, তোমরা অনেকে হয়তো জানোনা, বর্তমানে ভারতের যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি এক সময় তোমাদের মতো অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম হয়তো তোমরা শুনেছো। শিশুকালে তিনি ছিলেন অসহায় ও এতিম এবং সামান্য বেতনে রুটির দোকানে চাকরি করেছেন। এভাবে বিশ্বের অনেক বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীরাও তোমাদের মতো অসহায় অবস্থা থেকে বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে লেখাপড়ার মাধ্যমে বড় হয়ে গোটা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তোমরাও যদি কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া করো তাহলে তোমাদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ হতে পারো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এডভোকেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক বা বিশ্ববিখ্যাত কেউ। আমরা মানবিকতায় বিশ্ব দরবারে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেও নিজ দেশের ছিন্নমূল ও সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিশুদের পুনর্বাসন ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা প্রকট। ই-স্কুলের মতো উদ্যোগগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সমস্যাটির প্রতি ইঙ্গিত করলেও সমাজ ও রাষ্ট্র এক্ষেত্রে কেন যেন নির্বিকার। উল্লেখ্য: ই-স্কুলের পরিচালক নরেশ্বর দাস এই স্কুলটি ছয় বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন বিভিন্ন রকমের বাধা অতিক্রম করে করে আর্থিক মানসিক সাপোর্ট দিয়ে স্কুলটি বহু কষ্ট করে পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্র ও সমাজের সেই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্য চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ও আশেপাশের বস্তিতে থাকা অসহায় ও ছিন্নমুল শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টাই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছ ই-স্কুল এবং তাদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে তাদের পরিবার ও তাদের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
পড়েছেনঃ ১৩৩