ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্তবধায়কের সাথে আবাসিক চিকিৎসকদের বিরোধের ঘটনায় তদন্ত শুরু

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জানের সাথে আবাসিক চিকিৎসকদের বিরোধের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল  গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
এদিকে চিকিৎসকদের এই বিরোধের ঘটনায় দফায়-দফায় বৈঠকের কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও প্রায় ২ ঘন্টা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। এ ঘটনায়  রোগীসহ তাদের আত্মীয় স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের দুই আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রানা নূরুস শামস্ ও ফাইজুর রহমান ফয়েজের বিরুদ্ধে সরকারি সেবা বন্ধ রেখে  প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে প্যাকটিসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অবস্থায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় চলতি মাস থেকে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের বেতন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেন হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জান। এছাড়া চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ওবায়দুল্লাহও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। এজন্য তাকেও সতর্ক করেন তত্ত¡াবধায়ক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রানা নূরুস শামস্ ও ফাইজুর রহমান ফয়েজ এবং চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ওবায়দুল্লাহ সোমবার সকালে তত্তবধায়কের কক্ষে গিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় কৌশলে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন তারা।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তারা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করেন। আগামী ৭দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এদিকে তদন্ত কার্যক্রম চলার কারণে মঙ্গলবার হাসপাতালে কমপক্ষে দুই ঘন্টা চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। এতে ভোগান্তি পোহায় হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা। এ ব্যাপারে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রাম থেকে আসা আসমা বেগম বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকেট নিয়ে দরজার সামনে এসে দেখি ডাক্তার নেই। অনেক সময় অপেক্ষা করেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। ডাক্তাররা নাকি মিটিং করতেছে। ডাক্তার কখন আসবে আমরা জানি না।
হাজী আবদুল হাফিজ নামে আরেক রোগী বলেন, সকালে একবার ডাক্তার দেখাইছি। তখন তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা লিখে দিয়েছেন। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে এসে দেখি ডাক্তার নেই। এখন রির্পোট দেখানোর জন্য কয়েক ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছি। শুনেছি ডাক্তারদের কি মিটিং চলতেছে।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ফাইজুর রহমান ফয়েজ  বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত দল মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে লিখিত উত্তর নিয়েছেন। চট্টগ্রাম ফিরে গিয়ে তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জান বলেন, আমার সাথে তিন চিকিৎসকের অসৌজন্যমূলক ঘটনার কারনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু  করেছেন। প্রতিনিধিদলটি রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করবেন। তদন্তদল চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছেন, আমার সাথেও কথা বলেছেন। প্রয়োজনে আরো বলবেন।
 এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ একরামউল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের  প্রতিনিধিদল সরজমিন তদন্ত  কার্যক্রম শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটি উভয়পক্ষের সাথে কথা বলেছেন, এ  সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম।