
১৯০৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫ বছর আগে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হলেও বিদ্যালয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। শতবর্ষী এ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। নেই সীমানা প্রাচীর। পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাব। কিছু বেঞ্চ—টেবিল ভাঙ্গা। ছাদের আস্তর খসে পড়েছে। শ্রেণীকক্ষের মেঝের আস্তর উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়ছে দরজা—জানালা। রয়েছে শিক্ষক সংকট। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের বিদ্যাপীঠ দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। মাত্র ১৩ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক কম হওয়ায় নবম—দশম শ্রেণীর গ্রুপ ক্লাশ ব্যহত হচ্ছে। সরকারিকরণ হওয়ায় বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটি নাই। এতে স্থানীয় তদারকির অভাবে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা কমে গেছে। অপরদিকে কমিটি না থাকায় শিক্ষক নিয়োগসহ জরুরী উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসবের প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয়ের পাশের হার ৫৪%। সম্প্রতি অভিভাবক সমাবেশে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা।
সরেজমিনে দেবগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন একটি ভবনের ছাদের বেশ কিছু অংশের আস্তর খসে পড়েছে। শ্রেণী কক্ষের মেঝের কিছু কিছু জায়গার আস্তর উঠে গর্ত হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা গাদাগাদি করে বসে ক্লাশ করছে। বেঞ্চ—টেবিল ভাঙ্গা। জানালা ভাঙ্গা। মেয়েদের কমন রুমের জানালার গ্লাস ভাঙ্গা।
এসময় কয়েকজন ছাত্র ভাঙ্গা বেঞ্চ দেখিয়ে বলেন, বেঞ্চ ভাঙ্গার কারণে বই রাখা যায় না। কাঠের ভাঙ্গায় আটকে শার্ট ছিঁড়ে যায়।
বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন শিক্ষক আছে। গত ৩১ আগষ্ট সহকারী প্রধান শিক্ষক অবসরে গেছেন। বর্তমানে শিক্ষকের ৫টি পদ শূণ্য আছে। গত ৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ের শরীর চর্চার শিক্ষক নেই। নবম—দশম শ্রেণীর গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক নাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া লাল বাজার এলাকায় বিদ্যালয়ের ৪টি দোকান ভিটি আছে। দোকানগুলির ভাড়া মাত্র ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। যা আশে—পাশের দোকানের ভাড়ার চেয়ে অনেক কম।
এদিকে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় হতাশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। কয়েজন ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলে আখাউড়া শহীদ স্মৃতি কলেজ মাঠে গিয়ে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় তারা।
আইয়ুব খান নামের এক অভিভাবক বললেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা জরুরি। এতে শিক্ষার্থীরা আমাদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারবে। বড় হয়ে তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। একজন শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা দরকার। তাছাড়া বি শতবর্ষের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন খান বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবময় ইতিহাস। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জানা উচিত। এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা দরকার।
এসএসসি ২০০৪ ব্যাচের এক ছাত্র জানায়, আমরা যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই শুনে আসছি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মিত হবে। কিন্তু ২০২৩ সালেও আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নেই। বিদ্যালয়ের মাঠে গবাদি পশু চড়ায়। ক্লাশ চলাকালে ছেলেরা খেলাধুলা করে। বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মানও খারাপ। এজন্য তিনি প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের আন্তরিকার অভাব বলে মন্তব্য করেন।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মোঃ বাবুল মিয়া বলেন, সরকারিকরণ হওয়ার আগে আমরা স্কুলে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। এখন সরকারি হওয়ায় শিক্ষকদের জবাবদিহীতা নাই। শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্ধ পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি ১৯৯৩ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে শহীদ মিনার দেখিনি। ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর শহীদ মিনার নির্মাণে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কমিটির সহযোগিতা না পাওয়ায় করতে পারিনি। বাউন্ডারির বিষয়েও তিনি কমিটির অসহযোগিতার অযুহাত দেখিয়ে বলেন, এখন স্কুল সরকারিকরণ হয়েছে। বিদ্যালয়ে কমিটি নাই। সরকারি আদেশ ছাড়া কিছু করা যায় না। শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। ইউএনও স্যারের সাথে পরামর্শ করে ছোটখাটো যে সব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। বিদ্যালয়ের দোকানের ভাড়ার কমের বিষয়ে তিনি বলেন, দোকানগুলি অনেক আগের কমিটি ভাড়া দিয়ে গেছে। দোকানগুলির অবস্থা ভালো না। তাই ভাড়া কম।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অংগ্যজাই মারমা বলেন, এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
পড়েছেনঃ ৯৯