চুরি ঠেকাতে গিয়ে চাঁদাবাজ তকমা পেলেন যুবদল নেতা

চুরি ঠেকাতে গিয়ে চাঁদাবাজ তকমা কপালে জুটল সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিমের ভাগ্যে। আর প্রতিপক্ষের তথ্য সন্ত্রাসে সেই ঘটনা প্রচার পায় কিছু গণমাধ্যমেও। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন ফজলুল করিম নিজে। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা সন্তান।

জানা গেছে, মহানগরের হালিশহর পোর্টকানেকটিং এলাকায় চলন্ত ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা চুরি করছিল কয়েকজন চোর। এসময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি তার ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে স্ক্র্যাপ চুরি ঠেকাতে এগিয়ে যান। তিন চোরকে হাতেনাতে আটক করেন।

যেই গাড়ি থেকে স্ক্রাপ চুরি হয়েছে সেই গাড়ির চালক থেকে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে খবর দেন স্ক্র্যাপের মালিক আবুল খায়ের গ্রুপে। কিন্তু চুরি ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়া ফজলুল করিম চৌধুরীকে চাঁদাবাজ হিসাবে প্রচার করে একটি প্রতিপক্ষ চক্র। সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হয় বিভ্রান্তিকর সেই তথ্য।

সংবাদ সম্মেলনে ফজলুল করিম বলেন, সম্প্রতি দেশের কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছি মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেই সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হালিশহরস্থ বাসা থেকে আমাদের নেতা মো. আসলাম চৌধুরীর ফৌজদারহাটস্থ বাসভবনের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিই। যাওয়ার পথে হালিশহর ওয়াপদা গেট এলাকার পোর্ট কানেক্টিং সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একটি স্ক্র্যাপ বহনকারী ট্রাক নজরে আসে। ট্রাকটির পেছনে আমার কার হালকা গতিতে চলছিল। আমি দেখতে পেলাম কিছু কিশোর ওই ট্রাকের উপর থেকে স্ক্র্যাপ সড়কের উপর চুরির উদ্দেশ্যে ফেলছিল। একটি লোহার টুকরা আমার গাড়ির সামনে এসে পড়লে আমার প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন আমি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাক থেকে কিশোর চোরদের ধরে ফেলি এবং ট্রাকটির ড্রাইভারকে অনুরোধ করে বলি সড়কের এক পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমি স্থানীয় দোকানদারদের সামনে দুই কিশোর চোর ও তাদের সহকারী এক রিকসাচালককে চোরাই মালসহ ধরতে সক্ষম হই ।

তিনি আরও বলেন, তখন স্ক্র্যাপ বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভারকে বলি তার কোম্পানিকে অর্থাৎ স্ক্র্যাপের মালিককে কল দিতে। তখন ড্রাইভার আমাকে বলেন, এগুলো আবুল খায়ের স্লেটির স্ক্র্যাপ। আমি ড্রাইভারের কাছ থেকে আবুল খায়ের স্টিলের কর্মকর্তা হাসানের মোবাইল নাম্বারে কল করে বিস্তারিত জানাই। তিনি আমাকে বলেন, আমি ফ্যাক্টরি থেকে লোক পাঠাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় ২ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর পুনরায় আবুল খায়ের স্টিলের কর্মকর্তা হাসান সাহেবকে কল দিই। এর কিছুক্ষণ পর একটি সেনাবাহিনীর গাড়ি এসে আমাকে ও আবুল খায়ের স্টিলের কর্মচারী জামালকে হালিশহর থানায় নিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। হালিশহর থানা পুলিশ কিছু না বুঝে আমাকে পুলিশ কাস্টডিতে রাখে। ওই সময় কোনো এক ব্যক্তি আমার হাজতখানার বন্দি অবস্থার ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই ছবি দেখে গণমাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজখবর না নিয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবুল খায়ের স্টিলের এজিএম ইমরুলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা হালিশহর থানায় এসে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সত্য ঘটনা তুলে ধরেন। ইমরুল সেনাবাহিনীর সাথে ঘটনার বিস্তারিত সত্য ঘটনা তুলে ধরলে দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মমর্তা ও তার টিম হালিশহর থানায় এসে আমাকে মুক্ত করে।

কিছু সাংবাদিক এই তথ্যকে ডাইভার্ট করে ভুল সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমি এবং আমার সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই ন্যক্কারজনক মিথ্যা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও এ ধরণের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনাটি আপনাদের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জহুর, ইউসুপ নিজামী, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোরসালিন, উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মোস্তফা, বিএনপির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মঞ্জুরুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাহাবুদ্দিন রাজু, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক অমলেন্দু কনক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কোরবান আলী সাহেদ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ঈসমাইল হোসেনসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।