
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্কুল শিক্ষিকা পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ ওঠেছে প্রতিবেশী জহরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আর সেই কাজে থানা পুলিশের এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে সহযোগিতা ও গ্রেপ্তারের হুমকির অভিযোগ ওঠেছে। শুধু তাই নয় স্কুল শিক্ষিকার পরিবারকে তাদের জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতেও বাধা দেন প্রতিবেশী জহুরুল ইসলাম ও তার ছেলেরা।
এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় দুটি পৃথক অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্কুল শিক্ষিকা খুরশীদা বেগম ও সাহেদা আক্তার সেলিনা। অপরদিকে বিবাদীও আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করেছেন। থানা পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকেই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। তবে যেকোন সময় জমি দখলের আশঙ্কা করছেন স্কুল শিক্ষিকা খুরশীদা বেগম ও তার বোন সাহেদা আক্তার। খুরশীদা বেগম সীতাকুণ্ডের শিক্ষক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তিনি দীর্ঘ দিন চিটাগং ক্যামিকেল কমপ্লেক্স উচ্চ বিদ্যালয়, আনোয়ারা সিইউএফ হাইস্কুল, চন্দ্রঘোনা পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যায়লের শিক্ষিকা ছিলেন। অপরদিকে তার বোন সাহেদা আক্তারও একজন শিক্ষক। তিনি বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
স্কুল শিক্ষিকা সাহেদা আক্তার বলেন, আমার প্রতিবেশী জহুরল ইসলাম, তার ছেলে হাসান, তার স্ত্রী রহিমা বেগমসহ পূত্রবধুরা আমাদের জায়গা দখল করতে গত ১ মে শ্রমিক দিবসের দিন হামলা করে। ওইদিন তারা আমাদের নামে নামজারি থাকা জমিতে গাছ, বাঁশ দিয়ে সীমানা দিতে আসে। বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। পরে ৯৯৯ পুলিশে খবর দিলে পুলিশ আসে। এসময় আমরা তাদের বাঁশ, দা, খোন্তাসহ যন্ত্রপাতি পুলিশের গাড়িতে তুলে দিই। পরবর্তীতে তারা আর জায়গা দখল করতে আসবে না অঙ্গিকার করে পুলিশের কাছ থেকে জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে আনে।
অভিযোগে সাহেদা আক্তার ও তার বোন খুরশীদা বেগম যৌথভাবে উল্লেখ করেন, জহুরুল ইসলাম, তার ছেলে, স্ত্রী, দুই পূত্রবধূসহ পরিবারের সবাই আমাদের জায়গা দখল করতে আসে। অথচ আমার বাবা মৃত আবদুস সবুর ১৯৮৭ সালে ৪৭১৩ দানপত্র দলিলমূলে আমাদের নামে দলিল সৃজন করেন। আমাদের বিএস খতিয়ান নম্বর ৫৩৯, নামজারী খতিয়ান ৪৭৪৮। আমরা আমাদের জায়গার নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখলে আছি। কিন্তুু তারা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে আমরা বাড়িতে না থাকার সুযোগে।
অভিযোগে তারা আরো উল্লেখ করেছেন, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তাদের বিবাদী জহুরুল ইসলামরা আদালতে উচ্ছেদ মামলা করেন। ওই মামলায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে সাহেদা আক্তার ও খুরশিদা আক্তারদের পক্ষে রায় আসে। এরপর বিবাদীরা ২০১৩ সালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৪৫ ধারায় মামলা করলে আদালত মামলাটি নথিজাত করে। অথচ বিবাদীরা আদালতের আদেশ অমান্য করে আমাদেরকে হয়রানি করছেন। গত ২৮ এপ্রিল আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করলে তারা বাধা দেয়। ওইদিন তারা আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়। আমরা এ বিষয়ে থানায় জিডি করি এবং বাড়ি ফেরার পর জহুরুল ইসলামের ছেলেরা আবারও হুমকি দেয়। এরপর তারা হয়রানির উদ্দেশ্যে আবারও ১৪৫ ধারায় মামলার আবেদন করে৷ অথচ ওই আইনে এর আগে মামলা করলে আমাদের পক্ষেই রায় আসে। ১ মে সকাল ১০টায় তারা আমাদেরকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজে বাধা দেয়। কিন্তুু পুলিশ আসলে তারা জায়গা ছেড়ে চলে যায়।
এতে তারা আরও উল্লেখ করেন, সাহেদা আক্তার রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। দীর্ঘ দিন সুনামের সাথে তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বিবাদীরা যেকোন সময় তাদের ৩ বোনের সম্পত্তি দখলে নিতে পারে। তাদের ভয়ভীতি আর অব্যাহত হুমকিতে দুই স্কুল শিক্ষিকা বোন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষিকা সাহেদা আক্তারের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে সীতাকুণ্ড থানার এএসআই মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। সাহেদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, এস আই আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে আমাকে জায়গা থেকে সরে যেতে বলেন। ওনাকে কাগজপত্র দেখতে বললে, উনি বলেন আমি কোন কাগজপত্রই দেখবো না বলে জানিয়ে দেন। আমি বললাম এটাতো (বিবাদীদের ১৪৫ ধারার আবেদন) নিষেধাজ্ঞা হয়নি। আবেদন করা হয়েছে শুধুমাত্র। আতিকুর রহমান বললেন, কথা বেশি বললে আপনাকে ধরে নেওয়া হবে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে। আমি একজন স্কুল শিক্ষিকা তিনি আমার সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না। তার মতো অফিসারদের কারণেই বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি পক্ষপাত না করলে আমাকে কেন কথা বলার সুযোগ দিলেন না।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের আগস্টে কুমিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন আমাদের সাড়ে তিনহাত জায়গা দখল করে নেয়। ওইসময় এই স্বৈরাচারের সাথে জহুরল ইসলাম ও তার ছেলেরা যোগ দেয়। এবারও তারা একই কায়দা করছে।
জানতে চাইলে জহরুল ইসলামকে বহুবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার ছেলে মো. হাসানকে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে জহুরল ইসলামের পূত্রবধূ টিসা বলেন, আমাদেরকে থানার বৈঠক থেকে সাহেদাদের কাজ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। আমাদের জায়গা তারা দখল করে রেখেছে আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে। আমরা বহু নির্যাতনের শিকার। আমাদের বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নেই, তারা এতো নির্যাতন করছে।
জানতে চাইলে এসআই পরিমল চন্দ্র মল্লিক বলেন, সাহেদা আক্তারের জাতীয় জরুরী সেবায় করা ফোন পেয়ে আমরা সেখানে যাই। উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।
অভিযোগের বিষয়ে এএসআই মো. আতিকুর রহমান বলেন, আমি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি গিয়েছি পেশাগত কাজে। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না।