শেখেরহাট স্কুল হবে পুরো উপজেলার সেরা বিদ্যাপীঠ: আলাউদ্দিন রুবেল

শেখেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় হবে সীতাকুণ্ড উপজেলার সেরা বিদ্যাপীঠ। এ বিদ্যালয়কে পুরো উপজেলাব্যাপী পরিচিত করাবো। ভালো ফলাফল, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিয়ম-শৃঙ্খলা সবদিক থেকে এই স্কুলকে একটি আদর্শিক স্কুলে পরিণত করব আমি। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গর্ব করে বলতে পারবে আমি শেখেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকরাও বলবে আমি এই স্কুলের শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার এলাকাবাসী আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, এ আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন রুবেল।

তিনি আরো বলেন, স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে যে অশ্লীল বাক্য দেখতে পেলাম সেগুলো আমাকে নয় পুরো গ্রামবাসীকে হতাশ করেছে। আমি শীঘ্রই এগুলো মুছে ফেলার করেছি। স্কুলটিকে একটি ফুলের বাগানে রুপ দিতে চাই। কোন শিক্ষার্থী যেন মাদক, কিশোরগ্যাং, ইভটিজিংয়ে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের সন্তানরা কার সাথে হাঁটছে, কার সাথে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে? সেসব বিষয়ে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন হওয়া জরুরী।

রবিবার (১৮ মে) বেলা বারোটায় বিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় এলাকার কৃতি সন্তান ও প্রাক্তণ ছাত্রকে সভাপতি হিসেবে পেয়ে তারা উচ্ছাস প্রকাশ করেন। পরে ”হে মহান অতিথি স্বাগতম” গানটি পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আলাউদ্দিন রুবেল বলেন, বিদ্যালয়কে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সেজন্য আমি স্থানীয় সবার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করব। ইতিমধ্যে আমি একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিব। স্কুলের খেলার মাঠ উন্নয়ন, বিজ্ঞানাগার স্থাপন, পাঠাগার স্থাপন এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের উন্নয়নে উদ্যোগ নিব। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য সৃষ্টিতে শিক্ষকদের সহযোগিতা নিব। অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করব এবং নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা থাকবে।

 

এডহক কমিটির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, আজ আমি স্থানীয়দের কথা শুনতে এসেছি। তারা আমাকে পেয়ে অভিভূত হয়েছেন জেনেই আনন্দ লাগছে। আমি সমস্যা, সম্ভাবনার কথাগুলো শুনেছি। এ বিদ্যালয় নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব সমস্যাগুলো সমাধান করতে। এজন্য সকলের সহযোগিতা খুব বেশি দরকার। আমাদের এলাকায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। আমি তাদের সাথে পরামর্শ করে আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত এ বিদ্যালয়কে সুন্দর ও সেরা করে তুলব ইনশাল্লাহ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকরের সভাপতিত্বে এতে আরও অতিথি ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস মোস্তফা আলম সরকার, সৈয়দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী এনামুল বারী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আইনুল কামাল, উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ইসমাঈল হোসেন, বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন মাসুম, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আবু তাহের।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাকে নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেন। এদের একজন শেখেরহাটের বাসিন্দা মো. রাসেল। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে। একটিমাত্র ভবনে পাঠদান চলছে। প্রধান ফটকও অরক্ষিত।খেলার মাঠে পানি জমে। এছাড়াও দেওয়ের পলেস্তরা খসে পড়ছে এই বিদ্যালয়ের। আমরা আশা করছি, এলাকার কৃতি সন্তান মো. আলাউদ্দিন রুবেল দায়িত্ব পাওয়ায় বিদ্যালয়ের চিত্র পাল্টে যাবে। বিদ্যালটির অবকাঠামো উন্নয়নসহ, খেলাধুলার মনোরম পরিবেশ তৈরি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে তিনি কাজ করবেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়টিকে পুরো উপজেলায় ফুটিয়ে তুলবেন তিনি এমনটাই প্রত্যাশা করছি আমরা।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উত্তর জেলার আহ্বায়ক বাবু জিতেন্দ্র নারায়ণ নাটু বলেন, আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। তিনি এই বিদ্যালয়ের সব সমস্যার কথা জানেন এবং বুঝেন। এসবকিছু তার নখদর্পনে। আমাদের প্রত্যাশা অনেক বিদ্যালয়কে ঘিরে। আশা করি তার হাত ধরে সেসব পূরণ হবে একে একে। তার আছে তারুণ্যের শক্তি, কর্মস্পৃহা, দৃঢ়চেতা মনোভাব, প্রবল দেশপ্রেম। তিনি বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিবেন।

সৈয়দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আইনুল কামাল বলেন, যেকোন এলাকার শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর শিক্ষার উন্নয়ন মানে এলাকার উন্নয়ন, এলাকার উন্নয়ন মানেই বাসিন্দাদের জীবমমানের উন্নয়ন। এলাকাকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নানা সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদেরকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাহলেই সমাজটা সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে শিক্ষার মানোন্নয়নে, বিদ্যাপিঠের উন্নয়নে।

বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মাসুম বলেন, এই বিদ্যালয়কে যেমন সুন্দর ও পরিপাটি তথা পড়াশোনার যোগ্য পরিবেশসম্মত স্থান করতে হবে। সেইসাথে শিক্ষার উন্নয়ন সবচেয়ে জরুরী। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে হবে। তারা যেন ঝরে না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। আমি শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানাব, তারা যেন শাসনের বেত যেন না ছাড়েন, আর অভিভাবকদের বলব শিক্ষক কখনও ছাত্রের খারাপ চায় না, ছাত্র বিপথে যাক সেটি কখনও কোনো শিক্ষক কাম্য করেন না। তাই শিক্ষকের সাথে যখন তখন তর্কে যাবেন না, সন্তানকে সুপথে নিতে শিক্ষককে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসের আসক্তি কমাতে হবে। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদেরকে খেলাধূলা, সামাজিক কাজ, পরিবেশ রক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টি, আঁকাআকি, ইতিহাস শিক্ষা, শরীয়তের নানা দিক, কোরআন, হাদিস শিক্ষাসহ নানা কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই তারা সবদিক থেকে বিকশিত হবে।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালামত উল্লাহ বলেন, এই বিদ্যালয়ের দেওয়াল দেখে আমি অত্যন্ত হতাশ। দেওয়ালে নানা অশ্লীল বাক্য, ছাত্রদের নাম এলোমেলোভাবে লেখা রয়েছে। এতেই বুঝা যায় হাসিনা শিক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কতোটা বেপরোয়া হলে শ্রেণিকক্ষকে এভাবে নষ্ট করে। কোন ছাত্র এটা করতে পারে না। স্কুলের খেলার মাঠে পানি জমে আছে, দেওয়াল খসে পড়ছে। স্কুলকে নিয়ে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে তা বুঝার বাকি রইলো না। তারুণ্যদীপ্ত একজন মানবিক ব্যক্তি আলাউদ্দিন রুবেল সভাপতি হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার মেধা, শ্রম, সৃজনশীলতা দিয়ে এ বিদ্যালয়কে বহুদূর আগাবেন এটা আশা করতেই পারি।

পৌর যুবদলের সংগঠক তানভীর ফয়সাল বলেন, বিদ্যালয়ে অতিতে নানা দলীয় কর্মকাণ্ড চলতো। পড়াশোনা এখানে হয়েছে বলে মনে হয় না। সবকিছু জরাজীর্ণ। নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে এই বিদ্যালয়। মো. আলাউদ্দিন রুবেল একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে এর আগেও নানা কার্যক্রম করেছেন তার এলাকায়। এবার তার কাজের গতি আরও বাড়বে। কেননা এতোদিন তিনি নিজেই এসব কাজ করতেন নিজস্ব আঙ্গিকে। এখন একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই এ বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে দিয়ে স্থানীয়দের অবাক করবেন।

সাবেক শিক্ষার্থী আবু জাফর তুহিন বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, খেলার মাঠ কিছুই ঠিক নেই। আলাউদ্দিন রুবেল যেন এসব দিকে নজর দেন। একই কথা বলেন, সাবেক শিক্ষার্থী মো. আইয়ুব আলীও।