পাঠদানের কৌশল না জেনে’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান!

মো. তাসলিম উদ্দিন, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): শিক্ষকগণ জাতি গড়ার কারিগর। তাঁদের কোয়ালিটি হওয়া উচিত সবচেয়ে উচ্চতর ও উদারচিন্তার প্রয়োগিক মননশীল। শিক্ষকতা পেশার সেক্টরটাকে সমৃদ্ধ করতে হলে তা অবশ্যই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকেই জানে, একদিনের জন্যও কোন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করলে তিনি তার শিক্ষক। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী শব্দগুলো পারস্পরিক নির্ভরশীল ও একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষকবিহীন শিক্ষা যেমন কল্পনা করা যায় না তেমনি শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষাও অর্থহীন। আবার একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কী শেখাবেন? তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতা জীবনের সব থেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। একজন শিক্ষক হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার ও শিক্ষা সহায়ক ব্যক্তি হওয়ার যোগ্যতা থাকবে। সত্যি কথা বলতে, একদিক থেকে শিক্ষক একজন সত্যিকারের অতি মানব, যার থাকে সহজেই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। আবার একদিক থেকে শিক্ষক খুব সাধারণ একজন মানুষ, যে তৈরি করে অসাধারণ সব মানুষ। শিক্ষকতা কোন পেশা নয়, বরং একটি সেবা। সমাজে অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে। এর মধ্য শিক্ষকতা অন্যতম। শিক্ষকতা হচ্ছে একটি ব্রত, সে ব্রত দিয়ে শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীর মধ্যেইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। শিক্ষকের এই কাজটির সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।অথচ আমাদের দেশে যেকেউ যেকোনো সময় শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন! শিক্ষক হওয়ার জন্য শিক্ষকতা শিক্ষা করার অর্থাৎ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও পাঠদানের আধুনিক কলাকৌশল আয়ত্ত করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই! এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ তাঁর কাঙ্ক্ষিত অন্যান্য পেশায় যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে শিক্ষকতায় আসেন,এসেছেন। এর মধ্যে যিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা লাভ করে শিক্ষক হয়ে ওঠেন তিনি বা তাঁরা সংখ্যায় খুব বেশি নন।উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু রয়েছে। ইংরেজি শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন বাংলা ধর্ম ক্লাস, বাংলার শিক্ষক পাঠাদান দিচ্ছেন ইসলাম ধর্ম। এমন অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

এদিকে জানা যায়,পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শিক্ষক হওয়ার জন্য ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। তিনি যে পর্যায়ের, যে বিষয়ের শিক্ষকই হতে চান না কেন,তাঁর নিজস্ব বিষয়ে ডিগ্রির পাশাপাশি ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি থাকতেই হবে। অর্থাৎ পাঠদানের বৈজ্ঞানিক কৌশল না জেনে কেউ শিক্ষক হতে পারেন না। এমন কথা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে আছে ভিন্নরূপ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছেন এর মধ্যে কিছু নাম মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারা কয়েক জন মিলে আর্থিক ভাবে আর অন্য পেশার সাথে শিক্ষক হিসেবে নিজে প্রতিষ্টিত করতে গড়ে তুলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্টান। এদিকে খুঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকাও অফিস পাড়ায় সারা দিন অন্য মহৎ পেশার নামে ও নিজেকে জড়িত করে রেখেছে। অনেক সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য কিছু মানুষের সাথে লোভিং করে চলে তাদের অপতৎপরতা। কেউ কেউ মুখ খুলতে চাইলেও মান-সম্মানের ভয়ে অনেকে নিভৃতে চলে যায়। তাদের পেশায় অন্য কেউ আসলে তাদের নামে লেপটে দিতে চায় রাজাকার নামে। এই সবই পুরনো ইতিহাস। তারা মনে করে এই এলাকার তারাই শিক্ষিত মানুষ। আর যারা আছে তারা তাদের কাছ থেকে শিক্ষিত হয়ে বুঝতে হবে তাদেরকে না মানলে তারা বিভিন্ন সময়ে ফেক আইডির মাধ্যমে মানুষের নামে বিভিন্ন ভাবে অসত্য কথা তুলে ধরে। তাদের বানানো কিছু সহযোগি আছে। কেউ কিছু বললে তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যাচার। তাদের সুসম্পর্ক রেখে উপজেলার কয়েকটি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা তাদেরকে জামাই আদরে গাড়িতে রাত- দিন সুয়ার করাই। তাদের মতের বাইরে কেউ চলতে চাইলে হয়তো সে হবে অশিক্ষিত,আর নয়তো সে হবে রাজাকারের সন্তান। মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রবঞ্চনা করে তারা চলে। দিনের দশটা থেকে বারটা পযর্ন্ত জাতির শিক্ষা পাঠদানে তারা বড় শিক্ষিত,বিকেলে বিভিন্ন অফিসে হাইওয়েসহ আমরা শিক্ষিত মহৎ পেশার লোক। এ মহৎ পেশায় যদিওবা কেউ আসতে চেষ্টা করে তার পিছনে বিভিন্ন সমালোচনা দার করে দে। শুরু করেন ঘৃণিত হিংসাত্মক মনোভাব। তারা মনে করে, আমরা শিক্ষক আমরা সবচেয়ে বেশী জানি। আমরা যা করবো সবই ঠিক আর বাকি কি? তাই গ্রাম্য ভাষায় রয়েছে’মুখে তার চটাং চটাং কথা’ হাতের নিচের গন্ধে ঘুম আসে না। এর সাথে রয়েছে সমাজের এমন কয়েকজন তারা আগে পিচে সকল অবৈধ কাজের সহযোগিতা করে। এদের মহৎ পেশার দাপটে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমিটি নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ স্কুলে কমিটি হচ্ছে না।এ মহৎ পেশার ব্যক্তিরা স্কুলের কমিটিতে বারবার এডহক করে আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ধ্বংস হচ্ছে ঐসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যা সবাই সকলের মুখে মুখে।অবৈধভাবে কিছু দখল করে রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মুখে বলে কিন্তু দখলের উদ্ধার করে না।এমন করে অনেক অনুষ্ঠানে এখন আলোচনা হয়। তারামহৎ পেশায় থেকে সরকারি জায়গা দখল করে আমরা করলে কি? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে।

বিভিন্ন শিক্ষকদের মতে জানা যায়,বাস্তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ প্রশ্নে সম্মুখীন। সার্টিফিকেটের জোরে যে কেউ শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পড়ছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কেমন তা যাচাই করার কোন উপায় নেই। একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারি হবে। কিন্তু সার্টিফিকেট মেধার মূল্যায়ন করলেও মনুষ্যত্বের মূল্যায়ণের ক্ষমতা রাখে না। ফলে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও অনেকে নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। এজন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আঙুল উঠছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মান উন্নত করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের সামর্থ্য, দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে আগে দরকার যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ শিক্ষক। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পিইডিপি ৩ (প্রাথমিক স্তর), সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ), শিক্ষকদের মানোন্নয়নে টিকিউআই, সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাযায়, সরাইল উপজেলায় ২৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্টান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি কলেজ, ২০টি মাধ্যমিক ১টি আইডিয়াল ইনস্টিটিউট ও মাদ্রাসা ২টি। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে১৭ হাজার প্রায়। উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছেন-১২৬ টি ও কিন্ডারগার্ডেন রয়েছে প্রায় ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ হাজার।

সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা সব বিষয়ে ক্লাস নিতে হয়। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকলেও অনেক সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে অন্য শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হয়।এ ব্যপারে অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো.মোখলেছুর রহমান বলেন, আগে উচ্চ মাধ্যমিকে অনেক সময় ক্লাসে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে অন্য শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নিতে পারতো, তবে এখন আর এ সুযোগ নেই। তবে পাঠদানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বিকল্প নেই। সরাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন,শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের প্রয়োজন। একজন শিক্ষক একবার প্রশিক্ষণ নিয়ে সারা জীবন শিক্ষকতা করতে পারেননা। পাঠদানের আধুনিক কলাকৌশল আয়ত্ত করতে হবে। তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা দানে শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিকল্প নাই।সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালেদ জামিন খান বলেন,আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাবজেক্ট ভিত্তিক শিক্ষকের স্বল্পতা আছে।মানসম্মত বা গুণগত শিক্ষার জন্য শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রয়াস প্রয়োজন। শিক্ষকদেরকে আমরা বলি পাঠ পরিকল্পনা করে পাঠদান দেওয়ার জন্য। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন একটু গেপ সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। তিনি বলেন, মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে মানসম্মত শিক্ষকের প্রয়োজন।তবে বতর্মান সরকার নির্দেশনায় এনটিআরসি মাধ্যমে নতুন নতুন ভালো শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছেন বলে এ কর্মকর্তা বলেন।সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন,মহামারী করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।তার মধ্যে অনেক শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস করছেন। তবে মানসম্মত পাঠদানে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছেন।