হাটহাজারীতে ২৫০টি টেলিফোন সংযোগ অচল, সচল রয়েছে বিল

মো. আবু শাহেদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর সেবা না পেয়েও গ্রাহকদের প্রতি মাসেই গুনতে হচ্ছে টেলিফোন বিল। চার বছরেও অধিক সময় ধরে সেবা না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন টেলিফোন গ্রাহকরা। দীর্ঘদিন ধরে বিটিসিএলের লাইনে কাজ না করায় অধিকাংশ তার নষ্ট হয়ে গেছে। জনবল সংকটের কারণে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পুনরায় সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অচল লাইনে বিল সচল থাকায় গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হাটহাজারী বিটিসিএল অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় সরকারি অফিস ও ব্যক্তি মালিকানা মিলে প্রায় ২৫০টি টেলিফোন সংযোগ রয়েছে। সবগুলোই সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অচল। প্রায় চার বছর যাবৎ টেলিফোন
অফিসেই কোন লাইন নেই। বিটিসিএল হাটহাজারী অফিসের কন্ট্রোল বন্ধ রয়েছে বলেও জানা যায়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও নিয়মিত প্রতি মাসে সর্বনি¤œ১৭৩ টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার অনেকের বাকীরয়েছে অনেক টাকা টেলিফোন বিল।

এদিকে যাদের টেলিফোনে সংযোগ রয়েছে কিন্তু সেবা পাচ্ছে না। তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট মহলকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। আবার অনেকে টেলিফোন সংযোগ পেতে
আবেদন করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা।অথচ মাসের পর মাস বিল আসছে। ফলে গ্রাহকরা সেবা না পেয়েও বাধ্য হয়ে বিল পরিশোধ করছেন। এছাড়া অধিকাংশ গ্রাহক এখন আর বিটিসিএল যোগাযোগ করেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটহাজারী অফিসে কয়েকজন অফিস স্টাফ রয়েছে। ভবনে টেলিফোন সংযোগে ব্যবহৃত তার ও ড্রাম এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। ভবনের অবস্থা খুবই বেহাল অবস্থা এবং জরাজীর্ণ। প্রতিদিনই বন্ধ থাকে অফিস। কোন লোকজনই পাওয়া যায় না অফিসে।

হাটহাজারী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, অফিসে যোগদানের পর থেকে টেলিফোনের কোনো কার্যক্রম দেখতেছি না। কেউ বিলও নিতে আসে না। মুঠোফোনের চাহিদা বাড়ায় হয়তোবা এটার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাটহাজারী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খাঁন বলেন, পৌরসভায় টেলিফোন সংযোগের জন্য আবেদন করেও টেলিফোন মিলছে না। সংযোগ নিয়ে বড় একটা সমস্যায় আছি। তাদের অফিসে যোগাযোগ করেও কাউকে পাওয়া যায় না। হাটহাজারী সার্কেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত বলেন, টেলিফোনের কোনো কার্যক্রম পাচ্ছিনা। শুধু শুধু এটা লাগিয়ে রেখেছে। এটা বন্ধ থাকলেও বিল দিতে হচ্ছে আমাদের। আমি সর্বশেষ ১৭৩টাকা পরিশোধ করেছি। হাটহাজারী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান বলেন, আমি হাটহাজারীতে যোগদানের পর থেকেই
দেখি আমার অফিসে টেলিফোনের লাইন অচল। কিন্তু লাইনচার্জ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম বলেন, অফিসে টেলিফোন সংযোগ নিয়ে বড় একটা সমস্যায় আছি। টেলিফোন নাম্বারটা হল অনেক আগের এবং পুরাতন। মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে এই নাম্বারটা জানেন। আমার টেবিলে শো-পিসের মতন রয়েছে টেলিফোন সেট। এর কোন কার্যকরিতা নেই। আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষও অনেক সময় টেলিফোনে ফোন দেয়। কিন্তু অচল থাকার কারনে পায় না। এটার আমাদের জন্যও একটি বড় সমস্যা। আমি বিটিসিএল এর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দেখি কেন এমন হয়েছে।

হাটহাজারীতে টেলিফোন সেবায় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিটিসিএল হাটহাজারী শাখার ম্যানেজার মো. ইকবাল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টেলিফোন লাইনটি গেছে হাটহাজারী রাঙ্গামাটি- খাগড়াছড়ি মহাসড়কের মাটির নিচ দিয়ে। মহাসড়কের উন্নতির কাজ করায় অনেক জায়গাতে সংযোগ তার ছিড়ে গেছে। এজন্যই লাইন অচল হয়েছে। তবে কোন গ্রাহক যদি লিখিত আবেদন দিয়ে লাইন বন্ধ করে তাহলে তার আর বিল হবে না। লাইন বন্ধ না করার কারনে সর্বনি¤œ ১৭৩ বিল আসতেছে। তাও গত তিন মাস যাবৎ আমরা বিলের কাগজ পাঠাই না।