
ফারহান সিদ্দিক সীতাকুণ্ড: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে রাতের আঁধারে দুর্ঘটনায় কবলিত যানবাহন থেকে চাঁদাবাজির দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করতে চাইলে দুই সাংবাদিককে ধ্বস্তাধস্তি করে হেনস্তা, মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া, গ্রেফতারের হুমকিসহ চরম দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে কুমিরা হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করার সময় ভিডিও ধারণ করতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় জনতা ও যানবাহনের যাত্রীদের রোষানলে পড়ে ওই স্থান ত্যাগ করে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন- সময়ের নিউজ পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ফারহান সিদ্দিক ও একুশে পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হাজী এক্সপ্রেস বাসের (ঢাকা মেট্রো-১১-১২-১৫) যাত্রীরা বলেন, রাত এগারোটায় চট্টগ্রাম থেকে ভোলা যাওয়ার পথে সীতাকুণ্ড উপজেলার সামনে আমাদের বাসের চাকা নষ্ট হয়ে গেলে চালক বাসটি সড়কের পাশে পার্ক করে দ্রুত চাকা পরিবর্তনের কাজ সারছিল। কিন্তু হঠাৎ হাইওয়ে পুলিশের একটি গাড়ি উল্টো দিক থেকে এসে (১৪১২৯৫) বাসের সামনে থামে। হাইওয়ে পুলিশের ওই গাড়িতে একজন এসআইসহ ৫ জন পুলিশ সদস্য থাকলেও একজন কনস্টেবল এসে বাস চালককে কাগজপত্র দেখাতে বলে। বাস চালক চাকা পরিবর্তন স্থগিত করে কাগজপত্র দেখায়। এসময় কাগজপত্রে ত্রুটি পেলে র্যাকার ভাড়ার কথা বলে ২ হাজার টাকা দাবি করে। চালক ১ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে ধমক দিয়ে গাড়ির চাবি ও কাগজপত্র কেড়ে নেয়। একই কায়দায় একটি বালুবাহী ড্রাম ট্রাককে থামিয়ে টাকা দাবি করে হাইওয়ে পুলিশের ওই দলের সদস্যরা।
ঘটনার একপর্যায়ে দুটি গাড়ির চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল পুলিশ সদস্যরা। এ দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করতে চাইলে একজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় দায়িত্বরত পুলিশ মাসুদ রানা। একপর্যায়ে সাংবাদিককে গলাধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে তারা এবং চরম দুর্ব্যবহার করে ও গ্রেফতারের হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় জনতা এগিয়ে আসলে সবাই হৈচৈ শুরু করে। পরে পুলিশ সদস্যরা গাড়ি চালিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সময়ের নিউজ পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ফারহান সিদ্দিক বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত একটি বাস ও একটি বালুবাহী ড্রাম ট্রাক থেকে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করছিল কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। নিয়মানুযায়ী যানবাহনের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে মামলা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা টাকার মাধ্যমেই রফাদফা করছিল। এসময় টাকা লেনদেনের ভিডিও করতে চাইলে মাসুদ রানা নামের একজন পুলিশ সদস্য আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে যোগ দেয় করিম, লোকমানসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে এবং গ্রেফতারের হুমকি দেয়। আমার সহকর্মী আমাকে বাঁচাতে এলে তার সঙ্গে খারাপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। পরে জনতার রোষানলে পড়ে স্থান ত্যাগ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একুশে পত্রিকার প্রতিবেদক এম কে মনির বলেন, সহকর্মী ফারহান সিদ্দিক যানবাহন চালকদের কাছ থেকে পুলিশের টাকা আদায়ের দৃশ্য ভিডিও করতে চাইলে তারা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। গলাধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। চরম দুর্ব্যবহার করে এবং গ্রেফতারের হুমকি দেয়। আমি সেখানে এসে সহকর্মীকে বাঁচাতে চাইলে পুলিশ সদস্য মাসুদ রানা বলেন, আপনারা কিসের সাংবাদিক? কোন পত্রিকার সাংবাদিক? ভিডিও করার সাহস দিলো কে?বেশি কথা বললে মোবাইল ভেঙে ফেলব। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে একজন পুলিশ সদস্যের এমন আচরণে আমরা মর্মাহত হয়েছি। হাজী এক্সপ্রেস বাসের যাত্রী মো. জসিম বলেন, একজন পুলিশ সদস্য ২ হাজার টাকা দাবি করে। চাহিদামতো না দিলে গাড়ি থেকে নেমে আসেন মাসুদ রানা নামের আরেকজন। তিনিও ২ হাজার টাকা দাবি করেন। সাংবাদিকরা তাদের ছবি তুলতে গেলে মোবাইল কেড়ে নেয়, ধাক্কাধাক্কি করে। একপর্যায়ে আমরা যাত্রীরা মোবাইলে ভিডিও করতে চাইলে তারা সবাই নিজেদের পোশাকে থাকা নামের ফলক খুলে পকেটে নিয়ে নেয়। বাস চালক সুজন বলেন, বাসের চাকা হয়ে গেলে সড়কের পাশে বাস ভর্তি যাত্রীদের অপেক্ষায় রেখে চাকা পরিবর্তন করছিলাম। এসময় হাইওয়ে পুলিশ এসে বলে, কারা নাকি ৯৯৯ এ ফোন করেছে যে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগেছে। অথচ কোনও যানজটই ছিল না। পরে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলে। তাদের কথামতো কাগজপত্র দেখাই। এসময় গাড়ি ডাম্পিং করার হুমকি দিয়ে বলে, র্যাকার আসলে খরচ বাড়বে তাড়াতাড়ি করে ২ হাজার বের কর। আমি ১ হাজার টাকা দিতে চাইলে ধমক দিয়ে কাগজপত্র কেড়ে নেয়। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রাম ট্রাক চালক বলেন, বালু নিয়ে যাওয়ার পথে হাইওয়ে পুলিশ আমাকে থামায়। কোনও দায়িত্বশীল কেউ না এসে একজন কনস্টেবল গাড়িতে উঠে পড়ে। পরে আমাকে টাকার ইঙ্গিত দেয়। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিরা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ সময়ের নিউজ কে বলেন, আমি একটা দাওয়াতে আসছি । আসলে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব।