
ষাটোর্ধ কৃষক শওকতুল ইসলাম। চার সন্তানের জনক। উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা নন্দীরপাড়ার বাসিন্দা। টানা পাঁচ দিন ধরে আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) মহাসড়কের ওপর ঝুপড়ি বাসা বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। টানা এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে তাঁর বসতবাড়ি। নিরুপায় হয়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েসহ চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মহাসড়কের ওপর। সেখানে পলিথিন দিয়ে তৈরী করে ঝুপড়ি ঘর। শনিবার দুপুরে শওকতের স্ত্রী রোশন আরা বেগমের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এসময় তিনি বলেন, সৃষ্ট বন্যায় তাদের বসতঘর গলা সমান পানি ওঠে। পানিতে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। গত পাঁচ দিন ধরে তাঁরা সড়কের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। ব্যস্ততম সড়কের এক পাশে ঝুপড়ি ঘর। স্বামী,চার সন্তানসহ ছয়জন থাকি এঘরে। আতংকে দিন পার করছি। রাতে গাড়ির আওয়াজে ঘুমাতেও পারিনা। বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে গত দুদিন। এরপরেও বাড়িতে ফিরতে পারছিনা। কাদায় ভরপুর। বাড়িতে পা রাখলে হাটু পর্যন্ত কাদায় ঢুকে পড়ে। ঘরের অবস্থাও টলমল। এখনো জানিনা কয়দিন পর বাড়িতে ফিরতে পারবো। মেয়ে কলেজে পড়ে। লজ্জায় বের হতেও পারছেনা। এক দূর্বিসহ দিন পার করছি আমরা।
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, বন্যায় একবার তাদের কপালে সামান্য শুকনো খাবার জুটেছে। না খেয়েও দিন পার করতে হয়েছে। সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন তাঁরা। শুধু শওকতুল ইসলাম নয়, সড়কে তাঁর মতো অন্তত আরো বিশ পরিবার বসবাস করছেন। চার সন্তানের জনক দিদারুল ইসলাম বলেন, আমিও পাঁচদিন ধরে সড়কের ওপর পলিথিন মুড়িয়ে দিন পার করছি। ঝুপড়ি ঘর ঘেষে যাচ্ছে অহরহ গাড়ি। চরম আতঙ্কে থাকি প্রতিমুহুর্তে। একবার সামান্য ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, এবিসি সড়কের নুইন্যা-মুইন্যা ব্রীজ অংশ থেকে পেকুয়া-চকরিয়া সংযোগ ব্রীজ (বাঘগুজারা ব্রীজ)পর্যন্ত মহাসড়কের একাধিক পয়েন্টে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবসাস করছে অন্তত বিশটি পরিবার। বাসা বেঁধে রাখা হয়েছে গরু,ছাগল। কয়েকটি পরিবারকে গবাদিপশুর সাথে এক সাথে বসবসা করতেও দেখা গেছে। ব্যস্ততম সড়কে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু ছালেক বলেন,প্রায় ঘরে ত্রাণ গেছে। সড়কের ওপর আশ্রয় নেওয়া পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলে দিয়েছি তাদের জন্য রান্না করা খাবার পৌছে দিতে। এরপরেও আমি দেখবো। কিছুক্ষণ পরে সেখানে যাচ্ছি আমি।