সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিকরণ ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিকঃ আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবসের সভায় উপ-পরিচালক

সময়ের নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও সরকারের উপ-সচিব মোঃ বদিউল আলম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবিুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঝড়ে পড়া রোধ, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিকরণ ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে শিক্ষাথীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে শিক্ষার্থীরা আবারও পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টায় পূর্বের তুলনায় সাক্ষরতার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত হবে। এজন্য সবাইকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাহলে দেশ উন্নত হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে।

৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইংরেজি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে আয়োজিত আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-“সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার”। যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ও গণস্বাক্ষর অভিযানের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো আলোচনা সভার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস ও আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আবু রায়হান দোলন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা আর দুরদর্শিতা দিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু দেশ থেকে নিরক্ষতা দূর করতে এবং শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা দেন। সাক্ষরতা বিস্তারে আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়। প্রতিটি শিশু ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর কাছে মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দেয়া সরকারের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশকে উন্নয়নের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করে দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করা অতীব প্রয়োজন।

স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জুলফিকার আমিন বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে দেশে সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়। তখন আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। এ দিনে ঠাকুরগাঁও-এর কচুবাড়ী-কৃষ্টপুর গ্রামকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশে বাংলাদেশের প্রথম নিরক্ষতামুক্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সাােল ‘বাংলাদেশ সাক্ষরতা সমিতি’ গঠনের মাধ্যমে ১৮টি জেলায় গণশিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয় এবং এ কর্মসমূচীর মাধ্যমে ১৮ হাজার নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করা হয়। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ ও ১৯৯১ সালে ৩৫.৩ শতাংশ। দেশব্যাপী সাক্ষরতা বিস্তারে সরকার ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ‘সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন’ কর্মসূচী গ্রহণের ফলশ্রæতিতে ২০০০ সালে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘সবার জন্য শিক্ষা’র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় ইউনেস্কো প্রদত্ত ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করেছেন এবং ২০১৫ সালে ‘সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা’ সাফল্যজনকভাবে অর্জন করায় ইউনেস্কো প্রদত্ত ‘শান্তি বৃক্ষ’ পদক লাভ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জুলফিকার আমিন আরও জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারী ও গৃহগণনা-২০২২ অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ (৭ বছর উর্ধ্বে জনসংখ্যায়)। এর মধ্যে পুরুষের সাকাষরতার হার ৭৬.৫৬ শতাংশ ও নারীদের সাক্ষরতার হার ৭২.৮২ শতাংশ। আবার পরিসংখ্যান ব্যুরোর এসভিআরএস- ২০২০ তথ্যানুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ (১৫ বছর উর্ধ্বে জনসংখ্যায়)। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৩৩.৭৯ মিলিয়ন নিরক্ষর কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক নারী-পুরুষকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি যুগোপযোগী, অত্যাধুনিক ও সর্বজন গ্রহনীয় পরিবেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জন্য সাক্ষরতা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার জন্য সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আবু রায়হান দোলনের সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও সরকারের উপ-সচিব মোঃ বদিউল আলম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মোঃ জুলফিকার আমিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিটিআই’র সুপারিনটেন্ডেন্ট মোঃ জয়নাল আবেদীন, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়–য়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সদস্য সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের থানা প্রোগ্রাম ম্যানেজার চন্দন কুমার বড়–য়া, যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী ইয়াসমিন পারভীন, সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ আকতার, ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প পরিচালক রিংকু কুমার শর্মা, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম’র প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়–য়া, অপরাজেয় বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম জোন ইনচার্জ জিনাত আরা বেগম, বিটা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার বাপ্পা চৌধুরী, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা থোয়াইনু মং মার্মা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।