
দেশবাসীকে ৫ আগস্টের ঐক্যে ফিরতে বলেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে ৫ আগস্টের ঐক্যে ফিরে আসুন। তাহলে দেখবেন ভারত আমাদের কাছে সারেন্ডার করবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে যে ঐক্যে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল আমরা যদি ৫ আগস্টের সেই ঐক্যে থাকতাম তাহলে অনেক আগেই ভারত আমাদের কাছে সারেন্ডার করতো। তারা বুঝতো যে আমাদের আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছি। তারা দেশের পরিবর্তন মেনে নিতো। কিন্তু আমাদের ঐক্যে ফাটল স্পষ্ট হওয়াতে ভারত আবারও ফ্যাসিবাদ শক্তিকে আমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ৫ আগস্টের ঐক্যে ফিরুন। নইলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। এই ঐক্য ভাঙার দায় ছাত্রজনতা যেমনি নিতে হবে। তেমনি রাজনীতিবিদদেরও নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি দায় রাজনীতিবিদদের। কারণ তারা আমার মতোই প্রবীণ। বড় হয়ে আপনারা ছাত্রদেরকে স্নেহের ছাদরে নেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদ-ছাত্রজনতার মধ্যে ঐক্যের ফাটল ধরার কারণে ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড খেলে যাচ্ছে। গত দু’দিন ধরে তারা আরেকটি নতুন কার্ড খেলছে, সেটি হলো প্রফেসর ইউনুস সরকারের ‘ভুয়া’ পদত্যাগ। এই চট্টগ্রাম থেকেই তারা সংখ্যালঘুর কার্ড খেলেছে, ইসকন কার্ড খেলেছে। আপনারা নিশ্চয়ই সেগুলো ভুলে যাননি।
ড. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ভারত ইউনুস সরকারের ভুয়া পদত্যাগ তৈরি করে, সেটি ভাইরাল করার চেষ্টা করেছে। তরুণ উপদেষ্টাদের বিষয়ে বলেছে, ‘তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’। কোনো কোনো জায়গায় ফ্যাসিবাদের ক্যাডাররা মিছিল করারও চেষ্টা করেছে। দুই-এক জায়গায় গ্রেফতারও হয়েছে। এগুলো সবই ভারতের কার্ড। কিন্তু তারা পরাজিত হচ্ছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ ওয়াসিমসহ সব শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আপনারা ভাববেন না, ভারত আমাদের দেশে তাদের এতো বড় পরাজয় মেনে নিবে? গত ৫ মাস ধরে তারা প্রতিনিয়ত কার্ড খেলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামেও-তো ইসকন কার্ড খেলা হয়েছে। এখান থেকেই ‘সংখ্যালঘু’ কার্ড খেলা হয়েছে।
এই প্রকৌশলী সম্পাদক আরও বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে আমার শারীরিক উপস্থিতি ছিল না। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তবে আমার শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও, জুলাই আন্দোলনে চিন্তার উপস্থিতি ছিল, লেখালেখির উপস্থিতি ছিল।
তিনি বলেন, আমি যেইদিন আমার দেশ পত্রিকা পুনরায় প্রকাশ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করি সেদিন বলেছিলাম এটি আমার জীবনের শেষ ইনিংস।
তিনি বলেন, সংবর্ধনার উপযুক্ত আমি নিজেকে মনে করিনা। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। ১ নম্বর কর্তব্য ছিল প্রকৃত অর্থে একটি স্বাধীন সংবাদপত্র তৈরি করা। যেই সংবাপত্রে কারো কাছে মাথা নথ করবে না। কোন রাজনৈতিক দলের কাছে না, কোন ব্যবসায়ীর কাছে না, কোন দেশি-বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নথ করবে না। কারণ এই সংবাদপত্রের কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা নেই। কারণ আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলে। যেই পত্রিকা স্বাধীনতার কথা বলে সেই পত্রিকার সাংবাদিকরা আল্লাহ, রাস্ট্র এবং পাঠক এই তিন জায়গায় মাথা নথ করবে। আর কোথাও তারা মাথা করবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ একটা, ৫ আগস্টের্ ঐক্যে ফিরে যাওয়া। না হয়, আবারো ভারতের আধিপত্যবাদ ফিরে আসছে। আমি অনুরোধ করবো, আপনারা ঐক্য গড়ুন। রাজনীতিবিদদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। মতভেদ থাকলে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করুণ। এখনি আপনারা বিভক্ত হয়ে পড়বেন না।
তিনি বলেন, ১/১১ পর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রধান কারণ ছিল, আমি বুঝতে পেরেছিলাম জেনারেল মঈন যে আর্মি ক্যু-টা করেছিলেন, সেটি ভারতের নির্দেশে করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে ভারতের কাছে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটি আমি বুঝতে পেরেছিলাম। সেসময় আমি রাজনীতির মাঠে আসলাম। ওই সময় আমার মনে আছে দেশের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল। ওই সমাবেশের আয়োজনে ছিলেন বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সেটিই ছিল ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ। আমাদের ঘরোয়া সেই সমাবেশ অনেক দূর থেকে শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক শাহ নেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ , সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, শামসুল হক হায়দারি, মুস্তফা নঈম, পেশাজীবী নেতা ডা. খুরশিদ জামিল, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মোহাম্মদ, জানে আলম।