হাজারো স্বপ্ন ভেঙ্গে দুঃখে ভরা জীবন জরিনারঃ সংসার চলে আদি জালের মাছ বিক্রি করে

মাসুদ পারভেজ রুবেল, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ ক্ষণ স্থায়ী এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হাজারো স্বপ্ন বোনে বাস্তবায়নের জন্য। আর কজনা বা পায় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। কিন্তুু সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়নের আগে হঠাৎ মাঝ পথে যদি থেমে যায় নিরুপায় হয় বেঁচে থাকা। আজ আর সেই স্বপ্ন নেই আছে দুঃখ ভড়া জীবন বেঁচের থাকার কষ্ট। ভেঙ্গে যাওয় স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন বলছিলাম আদি জালে মাছ শিকার করে সংসার চালান জীবন যুদ্ধে হার না মানা কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জিগ্নিকান্দী গ্রামের মৃত মজিবরের মেয়ে জরিনা খাতুনের কথা।

২৫ বছর আগে গাইবান্ধার জান্দুর পুর গ্রামের মৃত নায়েব আলীর সাথে পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ হয় তার। কিন্তুু ১৭ বছর পূর্বে তার স্বামী মারা যান। সেই স্বপ্ন এখন তার দুঃখে ভড়া জীবন সঙ্গী জরিনার। জিগ্নিকান্দী গ্রামের এই নারী ৫৫ বছর বয়সে বর্তমানে বন্দবেড় ইউনিয়নের সোনাভরী শাখা নদীতে আদি জালে মাছ শিকার করে বিক্রি করে চলে তাঁর সংসার। মাঝে মধ্যে অনাহারে থাকতে হয় মাকে নিয়ে। জরিনার নিজের জমি ঘর বাড়ি বলতে বর্তমানে কিছুই নেই তার। সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় সমানভাবে থাকলেও মাছ শিকার করে সংসার চলে সাধারণত তাদের খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু জরিনা ছেলে ওপর নির্ভশীল না হয়ে এ পেশাকেই বেছে নিয়েছে জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য। সাহসী এই পথচলায় তাকেও সহ্য করতে হয়েছে হাসি-ঠাট্টা।

তবে কিছু লোকের সহযোগিতায় তার বিধবার নাম হয়েছে। তবে তা দিয়ে সাত ছন্দে সংসার চলে না। প্রতিনিয়ত তিন বেলা খাবারের কথা চিন্তা করতে হয়। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মাছ সংগ্রহ করতে। কখনো মাছ না পেলে অন্যনের বাড়ি কাজ করে যা পায় তাই নিয়ে বাড়ি ফিরেন। তার একটা মাত্র ছেলে ও মাকে নিয়ে বেঁচে আছেন। তার এই অভাবের সংসারে ছেলে মামুন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শুনা করেন। বর্তমানে অভাবের কারনে বাস গাড়িতে থাকেন ছেলে। সামান্য টাকা যা পায় হয় তা নিজের প্রয়োজনে শেষ হয়। বর্তমানে দ্রবমূল্যে দাম অনেক বেশি হওয়ায় কোনো মতে চলে তার সংসার।

বলতে বলতে চলে এসেছি ভিন্ন কথায় দুই জন্য রির্পোটার ও এক বন্ধুসহ ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ে নদীর ধারে রোদ দুপুরে এক নারী মাছ শিকার করছেন। ঠিক তখনি মনে ভিতর কিছু একটা মনে হলো রির্পোটারের। কেনো এই দুপুরে মাছ ধরছেন। একটু পরে ওই নারীর কাছে গিয়ে জানা গেলে উপরের সেই সব কথা। বেড়িয়ে আসে বেঁচের থাকার হাজারো স্বপ্ন বোনা জরিনার কথা । জানতে চাইলে মূহুর্তে দু চোখে জল চলে আসে তার। দীর্ঘ সময় করতে থাকেন কান্না বলতে থাকেন জীবন যুদ্ধে বেঁচের থাকা গল্প। কথা গুলো শুনতে শুনতে আপ্লুত হয়ে দুই বন্ধুর পকেটে থেকে টাকা বেড় করে দিলো। সেই টাকা পেয়ে হাজারো দোয়া করলেন তিনি।

কয়দিন পর তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলে জরা জিন্ন ভাঙ্গা বাড়িতে থাকেন জরিনা। তা মা ৭০ বছরের জহেরা খাতুন কান্না করতে করতে বলেন, বাবারে আমার মেয়েটার কপালে বিধাতা দুঃখ লিখেছিলেন। যানি না সুখ আছে কি না। তবে বাইচা থাকতে মেয়েটার জন্য কিছু একটা করতে পারলে মইরাও শান্তি পাইতাম।

শহর কিংবা গ্রামে অজানা এরকম জরিনার মতো হাজারো কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন অনেক সংগ্রামী নারী। অনেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কিন্তুু জরিনার টাকা পয়সা নেই বলে অনাদরে কেটে যায় দিন। সমাজের অনেক বৃত্তবান মানুষ আছেন যাদের সামান্য সহযোগীতা পেলে হয় তো এই জরিনা হতে পারে স্বাবলম্বী। এই জরিনার মতো অসহায় নারীর জন্য সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করেন অনেকে।

সংগ্রামী এই জরিনার সাথে কথা হলে তিনি জানান, কিশোরী বয়সে তার বিয়ে হয় নায়েব আলীর সাথে। পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ হয়। বিয়ের দুই বছরের মাথায় পেটে আসেন সন্তান মামুন। স্বামী মারা যাওয়ায় বাড়ি ভিটামাটি না থাকায় তিনি মায়ের বাড়িতে থাকেন। এখন বেঁচে থাকার জন্য মাছ বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি। কষ্ট হলেও এই পেশাকে তিনি সম্মান করেন। বর্তমানে তার নিজের বলতে কিছুই নাই। নিজের বাড়ি নাই, জমি নাই। মায়ের বাড়িতে থাকেন। জরিনা দেশের সব নারীকে নিজের কাজকে ভালোবাসতে বলেছেন। লোকে কী বললো, তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাকেই তিনি সবচেয়ে সম্মান মনে করেন।