মধ্যনগর প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার ছোট বড় সবকটি হাট বাজারে রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধগতি, সংকটে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এরই মধ্যে রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বিপাকে পরেছে দরিদ্র হতদরিদ্র ও দিনমজুর মানুষ গুলো। ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবারে একাধিক লোক রোজী রোজকার করেও খরচ মিটাতে অসম্ভব হয়ে পরেছে । তবে ক্রেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনের কাছথেকে বেশি দামে মালামাল কিনতে হচ্ছে, তাই আমরাও চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ।
নিত্যপণ্য লাগামহীন দাম বাড়ানোর খবর জানতে শুক্রবার (২৪ মার্চ) উপজেলার সদর মধ্যনগর বাজার, মহিষখলা, গোলগাঁও,বাঙালভিটা, দাতিয়াপাড়া, চৌরাস্তা, বংশিকুন্ডা, চাপাইতি বাজার সহ সবকটি বাজারে ঘুরে এসে, এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে । এমনকি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন বলেও মনে করছেন ভোক্তারা। এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা, খেসারির ডাল, মশুর ডাল, অ্যাংকর, বেসন, ডাবলি, সয়াবিন তেল, পাম ওয়েল, চিনি সহ সব পণ্যই দাম উর্ধগতি । বাজারে মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। এরমাঝে ফলফলাদিও দিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে, এরমধ্যে খেজুর, মাল্টা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, ইত্যাদি। পাশাপাশি শাক সবজির দামও আকাশ চুঁয়া।
বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রতিবছর রমজানের এক থেকে দুই সপ্তাহ আগেই এসব পণ্য দাম বেড়ে যায়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের আগে প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে স্থিতিশীল রয়েছে। রমজানে ছোলার চাহিদা থাকায় কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ছোলার কেজি ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। মানভেদে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, অ্যাংকর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, সয়াবিন লুজ তেল কেজি ১৯০ টাকা, পাম ওয়েল ১৫০ টাকা এবং চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। পলট্রি মুরগী কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, গরু মাংস কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আপেল ২৪০ টাকা, মাল্টা ২৪০ টাকা, আঙ্গুর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যর মূল্য বৃদ্ধির প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলেন,রমজানের পণ্যগুলো গত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দাম বেড়েছে। আমরা বাড়তি দামে পণ্য কিনেছি তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে রমজানকে কেন্দ্র করে শাক-সবজি, মাছ, মাংস সবকিছু দাম এখন আকাশচুম্বি। বাজারে ক্রেতারা তাদের চাহিদা মত পণ্য কিনতে না পেরে হয়ে পরছে দিশেহারা। একই দোকানে বার বার ভিড় করে পণ্যের দরদাম কষছেন ক্রেতারা। কম দামে পণ্য কিনতে না পেরে হতাশাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি এফবিসিসিআই নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন ভোক্তা অধিদপ্তর। দুটি সভায় ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে। রমজানে দাম বাড়বে না। শুধু তাই নয় রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও বাজারে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। তবে ভোক্তারা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে এখন মাত্র রমজান শুরু হয়েছে, এরই মধ্যে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। যাতে করে রমজানে দু’বেলা একটু ভালো খেয়ে গরিব মানুষ সংযম সাধনা করতে পারে।