
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের চরহোগলাবুনিয়া গ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে এক প্রতারক। বিষয়টি নিয়ে শত শত ভুক্তভোগী সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন। গতকাল রবিবার (১৩ মে) ওই এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীরা বাগেরাহাট জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবরে ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, পার্শ্ববর্তী ইন্দুরকানি উপজেলার জনৈক এবাদুল শেখ সাজ্জাদ ওই এলাকায় তার নানা বাড়ী হওয়ায় মামাতো ভাই মাষ্টার সরোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ওই এলাকায় এসে পুল, কালভাট, রাস্তা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ক্লিনিক সহ বেশ কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ধীরে ধীরে এলাকাবাসীর সাথে সে সখ্যতা গড়ে তোলে। পাশাপাশি এলাকার মানুষকে ভূল বুঝিয়ে সুকৌশালে প্রায় শতবিঘা জমি লিজ নিয়ে ছোট বড় কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করেন। এভাবে সে ‘ শেখ ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশন ও সৌদি বহুমুখী প্রকল্প’ নামে একটি সংস্থা দাঁড় করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩ টি দরিদ্র মানুষের বসত ঘর নির্মাণ সৌদি সংস্থার মসজিদ নির্মাণ, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, কওমি মাদ্রাসা, প্রতিবন্ধী স্কুল, টেকনিক্যাল কলেজ, কমিউনিটি ক্লিনিক, কৃষিকাজ, ধান চাষ, মৎস্য চাষ, সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানো বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কথা বলে প্রথম পর্যায় ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ১০/১২ টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন। তা দেখে এলাকা বাসীকে আগ্রহী করে তোলে। ধীরে ধীরে প্রতারণার ফাঁদ খুলতে থাকে। ৫ কক্ষ বিশিষ্ট ১৩ টি ঘর নির্মানের কথা বলে ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে সে।
পরবর্তীতে আরো ২৩ টি ঘর ৫ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করে দেবার কথা বলে ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে শতাধিক অসহায় পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক। বিভিন্ন ব্যাংকের চেক দিয়ে জনৈক কবিরুল আলম এক ব্যাক্তির কাছ থেকে কুয়েতি সংস্থার মসজিদ তৈরী করে দেয়ার কথা বলে দালাল মাষ্টার সরোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। কারিগরি কলেজে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কর্মচারী থেকে শিক্ষক পর্যন্ত ২৫ জনার কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৫০ জন পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়। প্রতিবন্ধী স্কুল, কওমি মাদ্রাসা, ক্লিনিক, মহিলা মাদ্রাসা, কলেজ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সৌদি আরব, কুয়েত সহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে ২০ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছে। ঘর নির্মাণের উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইট, বালু, সিমেন্ট রড বাকিতে নিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়েছে। তবে উক্ত প্রজেক্টের তিনটি গরু ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমির ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপর। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরু জমা আছে এবং ধান কর্তন করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারের কাছে জমা রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আকরামুজ্জামান বলেন, আমি লোকটিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে দেখেছি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এত প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে যা বুঝতে পারিনি। তবে এই প্রতারককে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম তারেক সুলতান বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি, আগামী বুধবার গণ শুনানির জন্য তাদেরকে ডেকেছি। গণ শুনানির পরে প্রয়োজন হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পড়েছেনঃ ১২৮