ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে এবার মুন্সীয়ানা দেখালো আওয়ামী লীগ। এবার দলটি নিজেদের প্রার্থীতেই আস্থা রেখেছে। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির সদস্য ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজুকে। এখন দেখার বিষয় দলীয় নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে কাজ করে নিজেদের প্রার্থীকে এগিয়ে নিতে পারেন কিনা। বিএনপি মাঠে না থাকায় কাজটা খুব একটা কঠিনও হবে না আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি কাকে প্রার্থী করেন সেটিও দেখার বিষয়। আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র দখলে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কোন্দল সেখানে তাদেরকে পিছিয়ে রেখেছে।
রবিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শাহজাহান আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ আসন থেকে মোট ১৬ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জয়লাভ করা প্রয়াত সংসদ সদস্য মাইনুল ইসলাম তুষারও ছিলেন। তাকে ঘিরেও ছিলো বেশ আলোচনা।
মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে এ আসনটিতে আবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর আব্দুস সাত্তার ভুঞা মারা যাওয়ায় এ আসনে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ি আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১১ অক্টোবর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১২ অক্টোবর, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপীল ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর, আপীল নিষ্পত্তি ১৮ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২০ অক্টোবর।
গত ১ ফেব্রয়ারি হওয়া সর্বশেষ উপ-নির্বাচনে বিএনপি’র বহিস্কৃত নেতা আব্দুস সাত্তার ভুইয়াকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলো আওয়ামী লীগ। দলীয় কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে আব্দুস সাত্তারকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আব্দুস সাত্তার বিপুল ভোটে জয়ী হন। তবে ভোটার টানার চ্যালেঞ্জে ‘হেরে’ যায় আওয়ামী লীগ। অন্তত ৩৫ ভাগ ভোটার টানার চ্যালেঞ্জে মাত্র ১৫ ভাগ ভোট পড়ায় আওয়ামী লীগের হিসেব গোলমেলে হয়ে যায়। তাদের প্রচারণাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্দলীয় প্রার্থীকে সংসদ সদস্য (এম.পি) হিসেবে জয়ী করার মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার প্রচারণাকে গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ।
উপ-নির্বাচনে এবার কোন পথে হাঁটবে আওয়ামী লীগ?- এমন আলোচনা ছিলো সর্বত্র। সংগঠনটি দলীয় কোনো প্রার্থী দিবে, নাকি ‘উন্মুক্ত’ ভোট দেওয়া হবে, নাকি আগের নির্বাচনের মতো বিএনপি’র কাউকে ম্যানেজ করে ভোটে পার করিয়ে আনবে- এমন আলোচনাই ছিলো সর্বত্র। সব কিছুকে ছাপিয়ে প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল ইসলাম ছিলেন বেশি আলোচনায়।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুস সাত্তার ভুঞা প্রথমে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি প্রার্থী হন। এরপর দল থেকে বহিস্কার করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আব্দুস সাত্তারকে ‘মির্জাফর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাকে ভোট না দেওয়ার আহবান জানায় বিএনপি। এর আগে দলীয় নির্দেশনা পেয়ে আওয়ামী লীগের তিন নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নেন। প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে একদিন প্রচারণা চালিয়ে লিখিত দিয়ে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির সাবেক এম.পি জিয়াউল হক মৃধা।
অভিযোগ উঠে, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভুঞাকে জয়ী করে দিতেই সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। আওয়ামী লীগ চায় সাত্তারের জয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি’র সংসদ সদস্যদের পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। বিএনপি’র কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবেও এসব অভিযোগ করা হয়।
ভোটের মাঠে কাগজে কলমে না থেকেও পদত্যাগ-পরবর্তী বিএনপি নেতা আবুদস সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণায় এম.পিসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের অংশগ্রহন বিএনপি’র অভিযোগের পাল্লাকে ভারী করে। এসব কিছুকে তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আব্দুস সাত্তারের পক্ষে ভোটের মাঠে থেকে যান। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের লক্ষ্যটা ছিলো বেশ পরিস্কার। আবদুস সাত্তারের জয়ের মধ্য দিয়ে তাকে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করানো বিএনপি’র ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো- এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলো আওয়ামী লীগ। সরকারি এ দলটি চাওয়া বিএনপি’র এ নেতা আবার সংসদে গিয়ে দলের সঙ্গে হওয়া বিরোধ নিয়ে কথা বলুক। ভোটে জিতে আব্দুস সাত্তার সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
পড়েছেনঃ ৯৫