জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের দমনে মিছিল, এখনও বহাল চসিকের সুপারভাইজার শহীদ

 

সময়ের নিউজ প্রতিবেদক:

জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট, খুনী হাসিনার দলীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যখন শতশত শিক্ষার্থী, পথচারী, অভিভাবকরা প্রাণ হারিয়ে বিচারহীনতার শঙ্কায় ভুগছিল গোটা দেশ ঠিক তখনি প্রশ্ন এলো কার কাছে বিচার চাইবো? খুনীতো স্বয়ং হাসিনা। মুহুর্তেই গণভবন অভিমুখে লং মার্চ পরশু নয় কালই করার সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রজনতা। পুরো কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। সারা দেশের ছাত্র-জনতা খুনী হাসিনাকে বিদায় করতে “এক দফা এক দাবি, ‘হাসিনা তুই কবে যাবি? ‘স্লোগানে আন্দোলন শুরু করে। উত্তাল সেই সময়েও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সুপারভাইজার শহীদুল ইসলাম সাহেদ সরকারি চাকরী ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগের হয়ে নামেন শিক্ষার্থীদের দমনে। ৪ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী সেক্রেটারি ও ভোট ডাকাত কথিত এমপি আল মামুনের সাথে সরাসরি মিছিলের সম্মুখ সারিতে অংশ নেন তিনি। যা সরকারি চাকরী বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার মিছিল করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে নতুন বাংলাদেশেও জুলাইয়ের চেতনা বিরোধী এই কর্মচারী বাধাহীন বহাল তবিয়তে চসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় চাকরী করছেন আগের মতোই।

তার বিরুদ্ধে এখনও হয়নি কোন মামলা কিংবা অভিযোগ। বর্তমানে অনুকূলে থাকা রাজনৈতিক নেতাদেরও ম্যানেজ করে চলার চেষ্টা করছেন তিনি। জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনকারীদের মতে, আওয়ামী লীগের হয়ে মিছিলে অংশ নেওয়া শহীদুল ইসলাম সাহেদকে অবিলম্বে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা দরকার। শুধু তিনি নন চসিকে স্বৈরাচারের অনেক ভূত রয়ে গেছে। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়নি। এখনও আওয়ামী লীগ ফিরে আসলে তারা হইহই করে নেচে ওঠবে।

তবে শুধু শহীদুল ইসলাম সাহেদ নয় তার পুরো পরিবারও আওয়ামী লীগের। তার ভাবী রওশন আরা মেম্বার ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক ইউপি সদস্য (৪, ৫ ও ৬) এবং তিনি উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই আবার ২০০৯ ও ২০১৪ সালে প্রবাসীর জমি দখল করে বাড়ি করার অভিযোগ আছে।

আওয়ামী লীগের সাবেক বিতর্কিত এমপি এস এম আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত শহীদুল ইসলাম ও দিদারুল আলমের আস্থাভাজন তার ভাবী রওশন আরা জমি দখল করে বাড়ির বানানের কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। দিদারুল আলমকে দিয়ে জমির মালিক প্রবাসী মেশকাত উদ্দিনকে শাসিয়েছেন একাধিকবার।

ভুক্তভোগী প্রবাসী মেশকাত উদ্দিন জানান, তিনি ওইসময় একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। এমনকি মামলা করতে গেলে তাকে ওইসময়ের ভোটহীন এমপি দিদারুল আলমকে দিয়ে মুঠোফোনে শাসানো হতো। বিচার না পেয়ে তিনি বিদেশে ফিরে যেতেন।

অভিযুক্ত রওশানা আরা সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুরের নূর মোহাম্মদ বাড়ির মুজিবুর রহমানের স্ত্রী। আর শহিদুল ইসলাম একই বাড়ির মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম ছাত্র জীবনে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুপারিশে সিটি করপোরেশনে তার চাকরী হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আছে ময়লা বাণিজ্যের অভিযোগ।

প্রবাসী মেশকাত উদ্দিন আরও জানান, তার নিজ নামে নামজারীকৃত ৪ শকত ও পৈতৃক সূত্রে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মালিকানার ৪ শতকসহ মোট ৮ শতক ভিটা মাটি দখল করে রেখেছে রওশন আরা ও তার পরিবার। ২০০৯ সালেই জোরপূর্বক তিনি জমিটি দখল করেন। এরপর সময়ের সাথে সাথে ইউপি সদস্য হয়ে ওঠলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এসময় দখল করা জমিতে তিনি বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।

প্রবাসী মেশকাত উদ্দিন প্রতিবেদককে তার নামে জমি থাকার প্রমাণ দিয়ে বলেন, আমি যখনই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানাতাম তখনই আমাকে এমপি দিদারুল আলম কল করে ভয় ভীতি দেখাতো। বলতো মেশকাত চুপ থাকো, বেশি কথা বলিও না এটা নিয়ে, তুমি বুঝনা ও একজন আওয়ামী লীগ নেত্রী এবং তোমার এলাকার মেম্বার।

তিনি আরও বলেন, রওশন আরা বেগম সম্পর্কে আমাদের দূরের আত্মীয়। অর্থাৎ আমার চাচাতো বোনের ছেলের বউ। তার শ্বাশুড়ি আনোয়ারা বেগম অর্থাৎ আমার চাচাতো বোন আমার পিতা ডা. ছালেহ আহমেদ গংদের বিরুদ্ধে গোলাভাগের মামলা করেন ২২৫/৮৯ যা পরে অপর মামলা ০১/৯৬ তে রূপান্তরিত হয়। কিন্তুু সেই মামলায় আনোয়ারা বেগম পরাজিত হন। অপরদিকে ডা. ছালেহ আহমেদ গং রায় ও ডিক্রী প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে আনোয়ারা বেগম আবারও চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ৫ম আদালতে মামলা করলে আপীল আদালত (আপীল নং ১৭৬/১৯৯৭) রায় ও ডিক্রী বহাল রেখে মামলাটি চালু করার পুনরায় আদেশ দেন।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মেশকাত উদ্দিনের ভাইয়ের স্ত্রী শেলী বেগম মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন সিভিল রিভিশন মামলা ৭৩/২০২৫ দায়ের করলে মহামান্য হাইকোর্ট পূর্বের মামলায় ১৭৬/১৯৯৭ কে রুল এবং চলমান মামলা ১/৯৬ কে স্টে অর্ডার দেন। এতে পূর্বের মামলার রায় ও ডিক্রী ডা. ছালেহ আহমেদের ওয়ারিশদের পক্ষে বলবৎ হয়ে যায়। কিন্তুু রওশান আরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার ৫৬৭ দাগের ২ গন্ডা জমি দখল করে রাখে।

তিনি আরও বলেন, রওশন আরা ও তার দেবর আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহার করে আমার ভাতিজাদেরও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অথচ ওদের বাড়ি কক্সবাজার। জোরপূর্বক তারা এই জমি দখল করে রেখেছে। আমি আমার জমি ফেরত চাই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের হালিশহর জোনে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত আছেন শহিদুল ইসলাম সাহেদ। অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কারো জমি দখল করিনি। মেশকাত উদ্দিন আমার একটি জমি দখল করে রেখেছে। আমি তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি সে ওয়ারেন্টের আসামি।

এসময় তিনি আরও বলেন, আমি মামুন (এস এম আল মামুন) ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম জমির বিষয়ে। আমি মিছিলের সাথে আসা কি আমার অপরাধ? বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে মিছিল করেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তিনি কোন স্লোগান দেননি। আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি নেতাদের সাথে তার ঢের বেশি সখ্যতা রয়েছে। এমনকি অনেক সাংবাদিকের নামও বলেন তিনি। তার দাবি বড় বড় সাংবাদিকের সাথে তার ওঠাবসা। যদিও তার বলা ওইসব সাংবাদিক চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ইতিমধ্যেই বিতর্কিত হয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পুলিশে তুলে দেওয়ার অভিযোগও আছে শহিদুল ইসলামের সখ্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার রাতে রওশন আরা মেম্বারকে তার মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া মিলেনি।