
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৩২ হাজার ৬১১ নারী তথ্য সেবা কর্মকর্তা তথ্য আপার সরাসরি সেবা পেয়েছেন। এর মধ্যে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে উপকারভোগী ৫ হাজার ৯০০ জন, তথ্যকেন্দ্রে আড়াই হাজার এবং ডোর-টু-ডোর সেবায় উপকারভোগী ২৫ হাজার ২০০ জন। এতে গ্রামীণ নারীরা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দক্ষতা অর্জন৷ চাকরীতে আবেদনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও সচেতন হতে পেরেছেন।
এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা তন্বী। এর আগে গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) ও বৃহস্পতিবার (১ মে) ১২০ ও ১২১ তম উঠান ৮সম্পন্ন করেন তথ্য আপা। এতে দূর দূরান্ত থেকে নারীরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি হিসেবে ইউএনও ও উপজেলার কর্মকর্তার পেয়ে তারা উচ্ছসিত। খুলে বলেন, মনের কথা, জানতে পারেন অনেক কিছু।
তথ্য আপা সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে (৩০ এপ্রিল) উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জোড়ামতল গ্রামের শিকদার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক। এটি “তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন” শিরোনামে নারীদের আইনি, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়। উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফখরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক তথ্যসেবা কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা তন্বীর সভাপতিত্বে ও উদ্যোক্তা মোঃ সোহেলের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার কল্লোল বড়ুয়া ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার জিয়াউল কাদের। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পুরস্কার প্রাপ্ত জয়ীতা ও নারী উদ্যোক্তা মুনমুন ভুইয়া, গ্রাম আদালত সমন্বয়কারী মোহসেনা আক্তার মীনা, মোঃ মাসুদসহ অন্যান্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও বলেন,উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে গ্রামীণ নারীরা প্রশিক্ষণের তথ্য নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছেন। আইনী পরামর্শ নিয়ে সহযোগিতা পেয়েছেন, আবার কেউ অনলাইন আবেদন করেছেন, কেউ বা বিনামূল্যে প্রেশার, ডায়াবেটিস, উচ্চতা ওজন মাপতে পেরছেন।
তিনি আরও বলেন, “তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন” প্রকল্পের আওতায় এই ১২০তম উঠান বৈঠক নারীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে বলে আমি মনে করছি। তারা এখানে এসে আজানা বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে পারছে এ ধরণের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে।
বিশেষ অতিথি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার কল্লোল বড়ুয়া বলেন, এই সকল সেবাগ্রহীতাগণ উপজেলা তথ্যকেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন। শুধু তাই নয় সবাইকে গৃহপালিত হাঁস, মুরগি, গরু ছাগল থেকে শুরু করে যেকোনো প্রাণির রোগ প্রতিরোধে সরাসরি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউল কাদের বলেন, এই ধরণের কার্যক্রম ভবিষ্যতে নারীদের আরও সাহসী ও ক্ষমতাবান করে তুলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা এই বৈঠকের মাধ্যমে নতুন দিকনির্দেশনা পেয়েছেন এবং তাদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও সচেতন হয়েছেন। আমরা যতটুকু সম্ভব এ উঠান বৈঠকের মাধ্যমে উপস্থিত নারীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশা করি তারা বুঝতে পেরেছেন।
সীতাকুণ্ড গ্রাম আদালতের উপজেলা সমন্বয়কারী মোহছেনা মিনা নারীদের জন্য গ্রাম আদালতের কার্যকারিতা কথা তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্নভাবে দিক নির্দেশনা দেন নারীদের। তারা যেন কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত না হয়।
অপরদিকে গত ১ মে বৃহস্পতিবার ১২১ তম উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ মালিপাড়া এলাকায়। “তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এই বৈঠক নারীদের শিক্ষিত, সচেতন ও স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উঠানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস। তথ্যসেবা কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা তন্বীর সভাপতিত্বে এবং উদ্যোক্তা নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রোখসানা পারভীন।
বক্তব্যে প্রধান অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় নারীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন সরকারি সেবা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিতে পারছে। এই তথ্যকেন্দ্র অনেক মহিলার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তারা এখন নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী।
বিশেষ অতিথি কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “গ্রামীণ নারীরা কৃষিকাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাদের আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুললে পরিবার ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হবে।”
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রোখসানা পারভীন তার বক্তব্যে বলেন, “এই উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীরা পারিবারিক সহিংসতা, নারী অধিকার ও সরকারি বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করছে। এটি তাদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার পথে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উদ্যোক্তা রুমানা আক্তার, তথ্যকেন্দ্রের সহকারী রাকিব হাসানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। আলোচনার এক পর্যায়ে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং তথ্যকেন্দ্রের কার্যক্রমকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে তথ্যসেবা কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা তন্বী বলেন, “আমরা চাই, প্রতিটি নারী যেন নিজের সমস্যার সমাধান নিজের মতো করে নিতে পারে। তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সেই পথই তৈরি করছি।