নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২৫’ 

মাহমুদা নাঈমা ; জাককানইবি প্রতিনিধি:

 

ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হলো ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫’। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়।

 

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম কালো ব্যাজ ধারণ করে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী কালো পতাকা উত্তোলন করেন।

এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে ‘চির উন্নত মম শির’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য। এরপর হল প্রভোস্ট ও শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আজ ১৪ ডিসেম্বর, শোকের দিন। ৫৪ বছর আগে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে এ দেশের সূর্যসন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের এ দেশের দোসর ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সেই ক্ষত এখনো পূরণ হয়নি। সেই বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যেত।”

তিনি আরও বলেন, “বিভাজন ও অনৈক্য এখনো সমাজে বিরাজমান। আমরা আমাদের বিবেক হারিয়ে ফেলেছি। ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় আমরা মেতে উঠেছি। সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ মানেই যেকোনো উপায়ে ধনী হওয়া—এই ধারণা তৈরি হয়েছে। পরিবারগুলোও সন্তানদের শিক্ষা শেষে কীভাবে বেশি আয়ের চাকরি পাওয়া যাবে, সেই চিন্তায় মগ্ন। বিবেকবোধ জাগ্রত করে সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন ঘটলেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। চারবার তালিকা প্রকাশ করেও সঠিক সংখ্যা বের করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ৫৬০ জন। যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস তত দিন থাকবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাঁদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।”

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি সাহা এবং দোলন-চাঁপা হলের প্রভোস্ট উম্মে ফারহানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট মো. হারুনুর রশিদ।এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।