সরাইলে ফসলি জমির পাশে ইটভাটায় জ্বলছে আগুন 

মো. তাসলিমা উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এবং আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।সরাইলে কৃষিজমির বাণিজ্যিক ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার ফলে কৃষিজমির যথেচ্ছাচার ব্যবহার করে নষ্ট করা হচ্ছে। বড় ধরনের বিপর্যয়ের আগেই কার্য্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার সরাইলে বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় জ্বলছে আগুন ,পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ।প্রতি বছরই কমছে ফসলি জমি।এছাড়া, সরকার হারাচ্ছে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা উচ্ছেদ এবং বৈধগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি মাঠ পর্যায়ে।সরাইল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক  সভাপতি মো. হাজী ইকবাল হোসেন বলেন,মানুষের নিত্য নতুন আবাসন, রাস্তাঘাট আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে কৃষিজমিতেই। কমছে কৃষি জমি।  দিনের দিন মানুষ বাড়ছে। ফলে আবাদী জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে বসত বাড়ি,স্থাপনা। ইট ভাটা হচ্ছে কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে স্থায়ী অনাবাদী জমিতে।
এদিকে অফিসের তথ্য মতে,২১৫.২৮ বর্গকিমি আয়তনের সরাইল প্রায় ২,৭১,১০১ মানুষের বাস। উপজেলা  মোট জমি  আবাদী জমির পরিমাণ ২১,৭,২০ হেক্টর উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন।এ উপজেলার ২৯টি ইটভাটা  রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় কয়েক মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে ওইসব ভাটায়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে। জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকিতে।জমি থেকে কাটা হচ্ছে ইট তৈরির মাটি।ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমাণ মাটির যোগান দিতে প্রতি বছরই ২-১ শ বিঘা ফসলি জমি জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে সম্প্রতি কালিকচ্ছএলাকার কৃষক প্রশাসনের নিকট  অভিযোগ করলেও কোনো কাজে আসেনি। ভিকু দিয়ে এখনো ফসলি জমির মাটি কেটে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। গতকাল সরাইল সদরের ইউনুছ মিয়া ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসে। কে শুনে কার কথা আর কি মানে নিয়ম নিতি। কালিকচ্ছ আকাশী বিলে অনিয়মই নিয়মে পরিনিত হয়েছে। এখন সবাই বলাবলি করে কার জোরে মাটি কাটে ভিকু দিয়ে। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, উপজেলার ২৯ ইটভাটা রয়েছে তবে কিছু ইটভাটা বন্ধ রয়েছে।  যার ফলে দূষণের কবলে পড়েছে পুরো এলাকা। গণবসতী এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল, বসতবাড়ির ফলজ-বনজ গাছপালা।গতকাল সরেজমিন কালিকচ্ছ ইউনিয়নের আকাশী বিলে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ট্রলি যোগে নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কোম্পানিরর ইটভাটায়। স্থানীয়রা জানান, দিনের পাশাপাশি রাতেও চলে মাটি কাটা। ফসলি জমি রক্ষায় ২০১৩ সালের পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রণ) আইন যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নিবেএমন আশা রাখে জমির মালিকসহ সচেতন সরাইল উপজেলাবাসী। এ প্রসঙ্গে সরাইল উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.নুরুল ইসলাম কালন বলেন, ইটভাটার যে মাটি কাটা হচ্ছে তা এক ফসলি জমি।যা জমির কোন ক্ষতি হয় না। তবে সরাইলে ২৯ টি ইটভাটা থাকলেও কিছু ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.একরাম হোসেন বলেন, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কারণে  অনেক ভাবে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। তবে সরাইল উপজেলায় ব্যাপকহারে ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি মাঠ  পর্যায়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে সচেতন করতে। এ ব্যপারে সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা নাসরিন বলেন, সরকারি আইনকে অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা ও ফসলি জমির মাটি কাটার সাথে জড়িতদের আইনের আয়ত্তে আনা হবে। মাটি কাটার ব্যপারে অভিযোগ পেয়েছি বলে, সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন,কোনো ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে দেয়া হবে না। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে  দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।