দেবীদ্বারে ১৫ ইউনিয়নের নৌকা- ৪, স্বতন্ত্র- ১০, স্থগিত- ১

এ আর রুহুল আমিন হাজারী, কুমিল্লা প্রতিনিধি: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সপ্তম ধাপে ৭ ফেব্রুয়ারী সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কুমিল্লার দেবীদ্বারে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নজিরবিহীন নিরাপত্তারয় ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এবার নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠ ও অবাধ পরিবেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ভোট দিতে দেখা গেছে। দির্ঘদিনপর ‘আমার ভোট আমি দেব, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব’-এ শ্লোগানের বহিঃপ্রকাশ করতে পেরে ভোটাররা আনন্দিত। তবে সরকার দলের বিভাজনে ও রাজনৈতিক মেরুকরণে নৌকার চরম ভরাডুবি হয়েছে বলে ধারনা সচেতনদের। খোদ স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মূন্সী এবং আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি ও উপ-মন্ত্রী এ,এফ,এম ফখরুল ইসলাম মূন্সী’র নিজ ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন- ১৮২ ভোট এবং বিদ্রোহী প্রার্থী’র আনারস প্রতীক পেয়েছে ৬৫৪ ভোট। গত উপজেলা নির্বাচনেও উক্ত কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে মাত্র ১৬ ভোট এবং ধানেরশীর পেয়েছিল ৯শতের উপরে ভোট।

৭নং এলাহাবাদ ইউনিয়ন আ’লীগ’র সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার বলেন, অভিযোগ করে বলেন, নৌকা ঠেকাতে স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মূন্সী, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি ও উপ-মন্ত্রী এ,এফ,এম ফখরুল ইসলাম মূন্সী এবং সাবেক বিএনপি দলীয় সাংসদ ইঞ্জিনীয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সীসহ জামাত কর্মীদের নিয়ে নিজ এলাকায় এসে নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারনা করেছেন। ফলে ১৪ ইউনিয়নের ১০ ইউনিয়নে নৌকার চরম ভরাডুবি হয়েছে। ধামতী ইউনিয়নের অপর পরাজিত নৌকার প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিন সরকার স্থানীয় সংসদকে অভিযোগ করে বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্ম ফখল’র চাচা এবং এপির পিতা আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি ও উপ-মন্ত্রী এ,এফ এম ফখরুল ইসলাম মূন্সীর ছোট ভাই ধানের শীষ প্রতীকের এ,এফ,এম তারেক মূন্সীর পক্ষে বিজয়ী করতে মাঠে থেকে কাজ করেছেন। তারা বিএনপি- জামাত নিয়ে ঐখ্য করে নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করতে একাট্টা হয়ে মাঠে কাজ করেছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মূন্সী মঙ্গলবার দুপুরে সেল ফোনে জানান, স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের বিধি নিষেধ থাকায় আমি নির্বাচন চলাকালে কোন ধরনের কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকতে পারবনা বলে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয কমিটির বরাবরে ঠিঠি দিয়েছি। সংশ্লিষ্টরা প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্যদের মনোনয়ন দিয়েছেন, নৌকার প্রার্থীরে বিজয়ে নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে জামাত-বিএনপি নিয়ে ঐক্য করে নৌকা ঠেকানোর যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। বিদ্রেুাহী যারা পাশ করেছে তাদের অধিকাংশই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের নেতা-কর্মী। এলাহাবাদ ইউনিয়নের একাধিক কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের মোঃ নুরুল আমীন’র পক্ষে ভোট কাটা, নৌকা প্রতীকের ভোট গননার বাহিরে রাখা এবং চশমা প্রতীকের বান্ডেলে নৌকা প্রতীকের ব্যালট যোগ করে বিজয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ করেছেন ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার। তিনি পুনঃ ভোট গণনার দাবীতে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

১৫ ইউনিয়নের মধ্যে বরকামতা ও গুনাইঘর (দঃ) ইউনিয়নসহ ২টিতে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে। ইভিএমে ভোট গ্রহনে দির্ঘসূত্রিতায় ভোটারদের বিড়ম্বনা এবং পাঞ্চমেসিন বিকল হওয়ার কারনে কোন কোন ভোট কেন্দ্রে ২৫-৩০ মিনিট বিলম্বে ভোট গ্রহন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৫ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্বী ১০৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র ১১ঘন্টা পূর্বে ভাণী ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মুকুল ভূঁইয়া হার্ট এটাকে মৃত্যুর কারনে ওই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। উক্ত ইউনিয়নে ১০ জন প্রতিদ্ব›দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ৯৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। ভোট গননা শেষে সোমবার রাত সাড়ে ১১ টায় স্ব-স্ব রিটার্নিং অফিসারগন মাইকযোগে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করেন। বেসরকারী ভাবে ঘোষিত বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন,- বড়শালঘর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ আব্দুল আউয়াল (আনারস) নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ জহরিুল ইসলাম জারু ভূঁইয়া (চশমা) ৩৯২৭। ইউসুফপুর ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ জাকারিয়া (আনারস) ৫২৩১ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক মোঃ মাজহারুল হক মামুন (ঘোড়া) ৩৮৮৪।

রসুলপুর ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ শাহজাহান সরকার (ঘোড়া) ৪৬৩৯ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ কামরুল হাসান (নৗকা) ৪০৬৪। সুবিল ইউনিয়নে বিজয়ী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম সারওয়ার মুকুল ভ‚ইয়া (চশমা) ৫৯৪০ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের (আনারস) ৪৫০১ ভোট। ফতেহাবাদ ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান মাসুদ (দোয়াত কলম) ৪৫৩৬ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন তাতী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন (ঘোড়া) ৪৪০৩ ভোট। এলাহাবাদ ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ নুরুল আমিন (চশমা) ৭৬৬১ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের (বর্তমান চেয়ারম্যান) মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার ৬৯২৭ ভোট।

জাফরগঞ্জ ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ জাহিদুল আলম (আনারস) ৬৬৭৪ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসেন (চশমা) ৪১২৩ ভোট। গুনাইঘর (উত্তর) ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মোহাম্মদ মুকবল হোসেন সাথে ৪৮১৪ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ আলী আজ্জম স্বজল (ঘোড়া) ৩৪৩৮ ভোট। গুনাইঘর (দক্ষিন) ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মোঃ হুমায়ুন কবির ৭২৫৬ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাকিম খান (আনারস) ৪৪৫৮ ভোট। রাজামেহার ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিন সরকার (চশমা) ৭৯২২ ভোট এবং নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ৪৭৮৫ ভোট। ধামতী ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মিঠু (আনারস) ৯৪৫১ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিন সরকার ১৮৩৪ ভোট। সুলতানপুর ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের অধ্যাপক মোঃ হুমায়ুন কবির ৫৪১৯ ভোট এবং তার কিটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ জসীম ইদ্দিন (আনারস) ৪৭৭০ ভোট। বরকামতা ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম ৮৭৪১ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মোঃ হারুন-অর-রশিদ (ঘাড়া) ৫৫০৮ ভোট। মোহনপুর ইউনিয়নে বিজয়ী প্রার্থী মোঃ ময়নাল হোসেন (মোটরসাইকেল) ৫৬৩৫ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ তাজুল ইসলাম (আনারস) ২৮৪১ ভোট।